টলেমীয় দর্শন এত জটিল যে টলেমি নিজে না বলে পারেননি: ‘গ্রহগুলো কী করে চলে, তা বোঝার চেয়ে আমার পক্ষে গ্রহগুলো চালানো আরও সহজ।’ তাঁর দর্শনের দৌলতে কিন্তু আকাশে গ্রহগুলোর গতির বিষয়ে আগে থেকে বলা সম্ভব হলো। তাঁর ধারণা ভ্রান্ত হলেও নিজের কালে টলেমি ছিলেন মহা জ্যোতির্বিজ্ঞানী, তাঁর দর্শন অ্যারিস্টটলের চেয়ে অনেক অগ্রসর। পরে টলেমীয় দর্শনকে সত্য বলে স্বীকার করে খৃষ্টীয় চার্চ। তাঁর ধারণায় সন্দেহ করাটা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়।
স্বাধীন চিন্তার সঙ্গে সংঘর্ষ হয় সে খালের খৃষ্টীয় বিশপ ও পাদ্রীদের। তাঁদের কাছে বিজ্ঞানী এবং তাদের বই—উভয়ই পরম শত্রু। টলেমি থাকতেন যে আলেকজান্দ্রিয়া শহরে, সেখানে তাঁর মৃত্যুর ২০০ বছর পরে একটা ব্যাপার ঘটে। প্রাচীন কালের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি ছিল আলেকজান্দ্রিয়ায়। চার লাখের বেশি বই ছিল, সবকটি হাতে লেখা। এমনকি আজকের দিনেও এ রকম একটা গ্রন্থসংগ্রহকে বড় লাইব্রেরি মনে করা হয়।
চিকিৎসাশাস্ত্র, ইতিহাস, ভূগোল, জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত এবং অন্যান্য বিষয়ে প্রাচীন কালের পণ্ডিতদের লেখা বই ছিল লাইব্রেরিতে। দেশ-বিদেশ থেকে পণ্ডিতরা আসতেন পড়তে। ৩৯১ সালে বিশপ থিওফিলাসের উস্কানিতে একদল লোক আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয় লাইব্রেরিটা। মহামূল্য সব জিনিস বিলুপ্ত হয়। স্বর্ণ বা হীরার চেয়ে দামি ছিল পুঁথিগুলো, ওগুলো তো আর ফিরিয়ে দেওয়া চলে না।
প্রায় বিশ বছর পরে উন্মত্ত জনতা প্রাচীন জগতের অন্যতম উল্লেখযোগ্য মহিলা—হাইপেশিয়াকে ছিন্নভিন্ন করে। হাইপেশিয়া ছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতের প্রথম শিক্ষিকা। সত্যসন্ধানী হাইপেশিয়া খৃষ্টীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের জয়লাভ চাইতেন, তাই বিশপ সিরিল তাঁর কাছে পাঠালেন খুনিদের…
টলেমীয় দর্শন কেন চার্চের সমর্থন পায়? তার কারণ বাইবেলে বলা সৃষ্টি কাহিনির সঙ্গে অনেক মিল আছে এ দর্শনের। একটা জিনিস শুধু অপছন্দ ছিল পাদ্রীদের। সেটা হলো গোলাকার পৃথিবী। তারা ধর্মভীরুদের বলে, পৃথিবী যে চ্যাপ্টা, তা মানতে হবে।
খৃষ্টীয় তত্ত্ব বাইবেলে দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে ঈশ্বর শুরুতে স্বর্গ ও মর্ত্য সৃষ্টি করেন, পৃথিবীর কোনো রূপ ছিল না, ছিল মহাশূন্য। তারপর ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলাদা করলেন আলোককে। পৃথিবী তাই শুরু থেকে বিশ্বের কেন্দ্রে, টলেমীয় দর্শনে যেমন।
টলেমির দর্শনে লোকে বিশ্বাস করে ১ হাজার ৪০০ বছর। পনেরো শতকের শেষে এবং ষোলো শতকের গোড়ায় কলম্বাস, ম্যাগেলান প্রমুখের মতো মহাঅভিযাত্রীরা সমুদ্র পথে যেসব সুদীর্ঘ যাত্রা করেন, তার ফলে তখনকার দিনে জানা পৃথিবীর সীমা অনেক বেড়ে গেল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।