টাইগারদের ভাবনায় আজ শুধুই জয়

স্পোর্টস ডেস্ক : ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’ বহুল প্রচলিত এই কথাটিকে মাথায় রেখে দ্বাদশ বিশ্বকাপে আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল সেমিফাইনালে খেলা। কিন্তু সেই স্বপ্ন ইতোমধ্যেই ভেঙে গেছে। ভারতের বিপক্ষে হেরে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে টাইগারদের সেমিতে ওঠার স্বপ্ন। আজ নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নামবে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। যেখানে প্রতিপক্ষ সরফরাজ আজমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান। ম্যাচটির ভেন্যু ক্রিকেটের তীর্থভূমি হিসেবে খ্যাত লর্ডস স্টেডিয়াম। স্টিভ রোডসের শিষ্যদের লক্ষ্য ইংল্যান্ডের মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তান বধ করেই দেশে ফেরা। খবর : ভোরের কাগজ

১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নেয় বাংলাদেশ দল। সেবার বিশ্বকাপ আসর বসেছিল ইংল্যান্ডে। পাকিস্তান তখন ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আকতার, ইনজামাম উল হক, সাঈদ আনোয়ার, সাকলাইন মোশতাক ও মঈন খানদের মতো ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া সে সময়কার পাকিস্তান দল ছিল অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু সেই পাকিস্তানকে হারিয়ে সারা বিশ্বকে চমকে দেয় আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। এরপর দুদল বিশ্বকাপে আর কখনোই মুখোমুখি হয়নি। সে হিসেবে বিশ্বকাপে মুখোমুখি হওয়া একমাত্র ম্যাচটিতে জয় পাওয়াটা আজ নিশ্চয় অনুপ্রেরণা জোগাবে টাইগার ক্রিকেটারদের।

বাংলাদেশের দ্বাদশ বিশ্বকাপের সেমিতে ওঠার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। তাদের লক্ষ্য এখন পাকিস্তানকে হারিয়ে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করা।

এই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ দলের পাওয়ার আছে অনেক কিছু। ম্যাচটি জিতলে পয়েন্ট টেবিলের পাঁচ নম্বরে থেকে দ্বাদশ বিশ্বকাপ শেষ করতে পারবে টাইগাররা। বিশ^কাপের মতো বড় কোনো টুর্নামেন্টের পঞ্চম সেরা দল হওয়াটাও কম পাওয়া নয়। যেসব দলকে হারানোর লক্ষ্য নিয়ে টাইগাররা বিশ্বকাপে অংশ নিতে গিয়েছে পাকিস্তান সেগুলোর মধ্যে একটি। সবচেয়ে বড় কথা, পাকিস্তানকে হারাতে পারলে জয়ের আনন্দ নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা।

বাংলাদেশের আশা শেষ হয়ে গেলেও পাকিস্তানের সামনে এখনো সেমিতে উঠার সুযোগ আছে। তবে সেটা থাকও না থাকার মতোই! সেমিতে যেতে হলে বাংলাদেশের বিপক্ষে অন্তত ৩১১ রানের জয় পেতে হবে পাকিস্তানকে। অর্থাৎ প্রথমে ব্যাটিং করে ৩৮০ রানের পুঁজি পাওয়ার পর বাংলাদেশকে ৬৯ রানে অলআউট করে দিতে পারলে তবেই শেষ চারের টিকেট পাবে সরফরাজের দল। আর যদি বাংলাদেশ টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয় তবে পাকিস্তানের সামনে সেমিতে যাওয়ার কোনো সুযোগই থাকবে না।

কেননা টাইগাররা যে লক্ষ্যই দাঁড় করাক না কেন সেটা পাকিস্তানকে টপকাতে হবে প্রথম বলেই। তাই পাকিস্তানের সেমিতে উঠা অসম্ভবই বলা যায়। তবে এসব নিয়ে না ভেবে ম্যাচ জেতার দিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শেষ ৩টি ম্যাচে জয় পাওয়ায় আমাদের সামনে সুযোগ তৈরি হয়েছিল সেমিতে যাওয়ার। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড হেরে যাওয়ায় সে পথটা অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে। যা রীতিমতো অসম্ভবও বটে। তবে আমরা এসব নিয়ে ভাবছি না। বাংলাদেশকে হারাতে চাই আমরা।

এদিকে সেমির আশা শেষ হয়ে গেলেও জয় দিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ করতে চান বলে জানিয়েছেন টাইগার দলপতি মাশরাফি। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের কাছে জানান, আমাদের লক্ষ্য ছিল শেষ চারে খেলা। কিন্তু সেটা পূরণ হয়নি। জয়ের লক্ষ্য নিয়েই আমরা প্রতিটি ম্যাচে খেলতে নামি। পাকিস্তানের বিপক্ষেও তার ব্যতিক্রম হবে না। যদিও এটা নিয়ম রক্ষার ম্যাচ, তবে জিতলে টেবিলের পঞ্চম স্থানে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করতে পারব। তাই আমাদের লক্ষ্য জয় তুলে নেয়া। এতে শেষটাও দারুণ হবে।

এদিকে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে টাইগার অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন বলেন, আমরা সেমিতে খেলার আশা নিয়ে ইংল্যান্ডে এসেছি। তবে সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। খুব হতাশ সবাই। এখন আমরা পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। পাকিস্তানকে হারাতে পারলে খুশি মনে দেশে ফিরতে পারব।

গতকাল অনুশীলনের সময় চোট পান ফর্মে থাকা টাইগার উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। তবে চোট তেমন গুরুতর নয়। গতকাল ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন টাইগার কোচ স্টিভ রোডস। এ সময় মুশফিকের চোট নিয়ে তিনি বলেন, মুশফিক কনুইয়ে হালকা চোট পেয়েছে। আশা করি, দ্রুত ফিট হয়ে উঠবে এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে কোনো অসুবিধা হবে না।

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান বধের ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। তিনি এখন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন। তার মতে, পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ দল শক্তিশালী। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলছি আমরা। তাই শেষ ম্যাচটি আমাদের জেতা উচিত।

র‌্যাঙ্কিংয়ে এখন বাংলাদেশ দলের অবস্থান ৭ নম্বরে। আর পাকিস্তান আছে ষষ্ঠ স্থানে। ওয়ানডেতে দুদল এখন পর্যন্ত ৩৬টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে টাইগারদের ৫ জয়ের বিপরীতে পাকিস্তানের জয় ৩১টি। সবচেয়ে বড় কথা শেষ ৪ ম্যাচের সব কটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ দল। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আজ পাকিস্তানকে হারিয়ে শেষটা রাঙিয়েই দেশে ফিরবে বাংলাদেশ দল এমনটিই চাওয়া এ দেশের প্রতিটি ক্রিকেট ভক্তের।