জুমবাংলা ডেস্ক : মাইকিং করেও ব্যাগভর্তি ৫ লাখ টাকার মালিকের সন্ধান পাননি ঠাকুরগাঁওয়ের শাকির হোসেন সৌরভ। তবে এরই মধ্যে কয়েকজন এর মালিকানা দাবি করে তাঁর মোবাইল ফোনে কল করেছেন। কিন্তু বর্ণনায় না মেলায় তাদের ভুয়া মনে হয়েছে সৌরভের। যদি প্রকৃত মালিকের সন্ধান না পান, তবে এই টাকা সরকারি কোষাগারে বা দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতে চান তিনি। রোববার দুপুরে এ কথা জানান সৌরভ।
সৌরভদের বাসা ঠাকুরগাঁও শহরের শান্তিনগর এলাকায়। মেশিনারিজ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন ও নিঘাত পারভীন দম্পতির তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় সৌরভ। তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়ক ধরে শহরে ফেরার পথে ব্যাগটি কুড়িয়ে পান। ভেতরে অনেক টাকা দেখতে পেয়ে নিয়ে আসেন।
সৌরভ বলেন, ‘এই টাকা হতে পারে কারও ব্যবসার মূল পুঁজি। হতে পারে কর্মস্থলের টাকা অথবা কারও কোনো স্বপ্নপূরণের সঞ্চয়। তাই ভেবেছি টাকাটি মালিকের কাছে পৌঁছে দেওয়া জরুরি। সে জন্য শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করি।’
এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তিনি পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে মাইকিং করার সিদ্ধান্ত নেন। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অনুমতি নিয়ে শনিবার দিনভর চলে মাইকিং।
কেন পুলিশের কাছে জমা না দিয়ে মাইকিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন? এমন প্রশ্নে সৌরভের উত্তর, ‘পুলিশের কাছে (যেতে) সাধারণ মানুষ সংকোচ করে, (তাদের) ভয় পায়। তা ছাড়া টাকার মালিককে অন্য কোনো ঝামেলায় পড়তে হতে পারে- সেই ভেবে পুলিশে জমা দিইনি।’ তাঁর পরিবারের সদস্যরাও চান, প্রকৃত মালিক যেন টাকাগুলো পান- তাই এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
তবে এরই মধ্যে কয়েকজন টাকার মালিকানা দাবি করে তাঁকে কলও করেছেন বলে জানান সৌরভ। তবে সঠিক বর্ণনা দিতে না পারায় তাঁদের ‘ভুয়া’ মনে হয়েছে। যদি কয়েক দিনের মধ্যে প্রকৃত মালিককে না পান তবে কী করবেন? জানতে চাইলে সৌরভের ভাষ্য, ‘সম্পূর্ণ টাকা সরকারি কোষাগারে অথবা অসহায়-দরিদ্রদের মাঝে প্রকাশ্যে বিলিয়ে দেব।’
সৌরভের প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমানতউল্লাহ্ ইসলামী একাডেমির শিক্ষক আমির হোসেন বলেন, ‘ছাত্রজীবনে সৌরভ ছিল অনেক সৎ। তার লোভ-লালসা ছিল না। ছেলে হিসেবেও অনেক ভদ্র। তার এমন ভালো কাজে শিক্ষক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে।’
ওই একাডেমি থেকেই ২০১১ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। ইচ্ছা ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। তবে বাবার ব্যবসায় সময় দিতে হয় এক বছর। এতে কিছুটা পিছিয়ে পড়েন। তবে পরের বছরই ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন কম্পিউটার সায়েন্সে। ২০১৬ সালে ডিপ্লোমা শেষ করে আবারও বাবার ব্যবসায় সময় দিতে হয় সৌরভকে।
২০১৮ সালে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। শহরের বাসস্ট্যান্ড স্টেডিয়াম এলাকার মদিনা মেশিনারিজে খুচরা বিক্রির পাশাপাশি পাইকারি মেশিনারিজ ও ক্রোকারিজ মালামাল বিক্রি করেন। সেখানেও তাঁর মূলধন সততা। সৌরভের বন্ধু গোলাম মোস্তফা বাঁধন বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি। ব্যবসাও করি একই সঙ্গে। টাকা-পয়সা নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়নি। অনেক খুচরা দোকানে পাইকারি দরে মালামাল সরবরাহ করি। অন্য ব্যবসায়ীরা সৌরভকে ভুলে বেশি টাকা দিলেও সে ফেরত দিয়ে দিত।’
স্বামীর এমন কাজে গর্বিত সৌরভের স্ত্রী ফরিদা পারভীন। আর বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ছেলের টাকা কুড়িয়ে পাওয়ার সংবাদ শোনার পর তাকে বলেছি, যেভাবে হোক টাকা প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছাও। আল্লাহ আমাদের যথেষ্ট দিয়েছেন, অন্যের টাকার ওপর লোভ নেই।’ টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য তাঁর মাইকিং শুনে অনেকে সৌরভের প্রশংসা করছেন বলেও জানান তিনি।
মাইকিং করে টাকার মালিকের খোঁজ করার এই অভিনব উদ্যোগটিকে প্রশংসনীয় উল্লেখ করে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার রহমান বলেন, প্রকৃত মালিকের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য মাইকিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি এ উদ্যোগের সাফল্য কামনা করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।