মামুন রশীদ : করোনা সমস্যাটি অভূতপূর্ব ও বৈশ্বিক সমস্যা। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবার সমস্যার চেয়েও ব্যবস্থাপনার সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে সরকার, এনজিও এবং ব্যক্তি খাতের সব উদ্যোগকে একই দিকে ধাবিত করা দরকার। আরো প্রয়োজন বিপন্ন ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ফিরিয়ে আনা। বিষয়টি শুধু ‘টাকা ছাপানোর’ ব্যাপারে সবার মনোযোগ কিভাবে আকর্ষণ করে ফেলল তা আমি জানি না। তবে আমি অনেকটা নিশ্চিত টাকা ছাপানোর দরকার নেই।
একটি কথা পরিষ্কার বলে নেই, এরই মধ্যে সরকার যে প্রণোদনা বা তারল্য সহায়তা ঘোষণা করেছে, তার প্রায় পুরোটাই আসবে ব্যাংকব্যবস্থা আর সরকারের বাজেট বরাদ্দ থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংবিধিবদ্ধ নগদ জমার হার দেড় শতাংশ কমিয়ে প্রায় ১৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যাংকগুলোতে তারল্যের সংস্থান করেছে। ব্যাংকগুলোর এসএলআর বা স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও বাবদ দুই লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রয়েছে তিন লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। সরকার অনুমোদিত সিকিউরিটিতে অতিরিক্ত জমা হঠাৎ তুলে না নেওয়া গেলেও তার বিপরীতে ‘রিপো’ করে সহজেই তারল্য সৃষ্টি করা সম্ভব। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই কারণেই হয়তো ‘রিপো’ রেট বা হার ০.৫০ শতাংশ কমিয়েছে।
করোনা প্রণোদনা ব্যবহার বা ত্রাণ সহায়তায় বাজেট ঘাটতি ১০ শতাংশে পৌঁছালেও মানি গ্রোথ আরো ৫-৬ শতাংশ বাড়িয়ে অর্থের সংস্থান করা সম্ভব। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে সিআরআর (নগদ জমা) কিংবা এসএলআর (সরকারি সিকিউরিটিতে জমা) কমিয়ে এনে আরো টাকার সংস্থান করতে পারে। নিম্ন চাহিদা বা ক্রয়ক্ষমতা আর উচ্চ মূল্যস্ফীতিজনিত সংকটাবস্থা ঠিক করতে অনেক বড় দেশেরও ১০-১৫ বছর লেগে গিয়েছিল। তাই সমস্যার সমাধান টাকা ছাপানোতে নয়, সামনে গভীর সংকট বিবেচনায় সবাইকে নিয়ে বর্তমান স্বাস্থ্য সংকট এবং মধ্য ও দীর্ঘকালীন খাদ্য, কর্মযজ্ঞ সৃষ্টির সমস্যার সমাধান করা দরকার।
আমাদের এবার ভালো বোরো ধান ফলেছে, কিন্তু ধান কাটার পর্যাপ্ত লোক নেই। আউশ ধানও হয়তো ভালো হবে। তবে তাও যথেষ্ট নয়। কারণ আগে যাদের আয় ছিল, নিম্ন আয়ের তারাও এখন সরকারের কাছে হাত পাতবে। শুধু সরকারি ত্রাণ বা সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দ এখানে যথেষ্ট নয়। সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে সব এনজিও এবং ব্যক্তি খাতের প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তির নিজস্ব উদ্যোগকেও। ত্রাণ বিতরণে পুলিশ-সামরিক বাহিনীকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সেটা ভালো। তারা হয়তো নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেবে। এ ক্ষেত্রে তার চেয়েও বড় প্রয়োজন এনজিওর।
আজকের সমস্যা আগের যেকোনো সমস্যার চেয়ে বহু বহুগুণ বেশি। সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবে না।
লেখক : মামুন রশীদ, অর্থনীতি বিশ্লেষক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।