জুমবাংলা ডেস্ক : টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর গারো কোচ নারীরা নিজ বাড়িতে কেঁচো জৈব সার উৎপাদনে দিন-দিন এগিয়ে যাচ্ছে। সংসারের কাজের পাশাপাশি নারীরা কেঁচো সার তৈরি করে বাড়তি আয়-উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়েছেন।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ কেঁচো সার উৎপাদনে নারীদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করছে। এই জৈব সারে ফসলে ভালো ফলন পাওয়ায় বাড়ছে কৃষকের চাহিদা। ভালো দাম পেয়ে সংসারের অভাব ঘোঁচানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নারীরা।
মাটির চারি, সিমেন্টের রিং চারি, বালতিতে কেঁচো দিয়ে জৈব সার উৎপাদন করছেন নারীরা। স্থানীয়ভাবে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে শুরু করেন কয়েকজন নারী। ধীরে-ধীরে এখন অনেকেই কেঁচো সার উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা। ভুটিয়া, ধরাটি, গাছাবাড়ি, ইদিলপুরসহ বেশ কিছু গ্রামের নারীরা সংসারের কাজের ফাঁকে কেঁচো জৈব সার উৎপাদন করছে। গোবর, খড়কুটাসহ সার তৈরির কাঁচামাল সহজলভ্য থাকায় সহজেই উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপনন করছেন।
সরেজমিনে মধুপুর উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের ভুটিয়া গ্রামে গিয়ে কথা বলে জানা যায়, নারীদের কেঁচো দিয়ে জৈব সার উৎপাদনের গল্প। তারা জানালেন, এ কাজে বাড়তি শ্রম না থাকায় নিজেরাই জৈব সার প্রক্রিয়া করে থাকেন। পুরো প্রক্রিয়াই নারীদের হাতে। এ গ্রামে এক সময় তাদের বসবাস বেশি থাকলেও এখন মাত্র ৪০-৫০ পরিবারের বসবাস। বাঁশ-বেতের পেশা থাকলেও উপকরণের দাম বৃদ্ধি ও প্লাস্টিকের দাপটের কারণে এ পেশা ছেড়ে কেউ কৃষি, কেউ দিন মজুরি আবার কেউ ভ্যান-রিক্সা চালানোর কাজ করেন। নারীরা বাড়ির কাজ আবার কেউ দিন মজুরি করেন। কয়েক বছর আগে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর নেতা অজয় এমএএলআরডি নামক সংস্থা থেকে ভুটিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের নারীদের কেঁচো পালনের উপর প্রশিক্ষণ দেন। সে থেকে তাদের গ্রামে কেঁচো দিয়ে জৈব সার তৈরি শুরু। কয়েক বছর আগে অনেকেই করলেও এখন হাতে গোনা ৫/৭ জন নারী ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করছেন। বসত বাড়ির আশপাশে চারি, বালতি, রিংসহ নানা উপকরণে নিজের গোয়ালের গোবর দিয়ে কেঁচোর মাধ্যমে সার তৈরি করছে। কেঁচো দিয়ে জৈব সার তৈরি করতে প্রায় এক মাসের মতো সময় লাগে। এ সার তারা স্থানীয় কৃষকদের কাছে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারেন।
গৌরি রানী বর্মন (৪০) জানান, তার ১০-১২ চারি রয়েছে। এ থেকে যে সার আসে, তা নিজেদের জমিতে প্রয়োগের পর বাড়তি সার বিক্রি করে দেন। সার বিক্রির টাকা সংসারের কাজে ব্যয় করেন। এতে তিনি ভালোই লাভ পাচ্ছেন। এমনটাই জানালেন তিনি।
প্রমিরা রানী (৪২) জানালেন, বাড়ির কাজের ফাঁকে-ফাঁকে দিনে দুই একবার সময় দিয়ে থাকেন। ঘরের বারান্দায় কেঁচো সার উৎপাদনের রিং থাকায় যে কোন সময় দেখতে পারেন। তিনি জানালেন- বাড়ি বসে থাকার চেয়ে কিছু সার পেয়ে নিজের কাজে লাগান। আবার বিক্রি করে কিছু টাকাও আসে। এতে সন্তানদের পড়াশোনা, নিজের হাত খরচ চালাতে কোন সমস্যা হয় না।
শুধু ভুটিয়াই নয়, মধুপুরের অনেক গ্রামের নারীরা করছে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করে থাকে। এতে একদিকে নারীদের অর্থনৈতিক লাভ হচ্ছে। অপরদিকে মাটিতে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ছে। মাটির গুনাগুন বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে ফসলের ফলন।
আচিক মিচিক সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সুলেখা ম্রং বলেন, গারো কোচ নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন করে নিজেদের প্রয়োজন মিটানোর পর বিক্রি করছেন। এতে সংসারে স্বামীকে সহযোগিতার পাশাপাশি নিজের ছোট-খাটো খরচ চালাতে সমস্যা হচ্ছে না। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচও চালাতে পারছেন। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাড়বে নারীদের কেঁচো জৈব সার উৎপাদন, বাড়বে নারী পুরুষের কর্মসংস্থান। মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাবে, বাড়বে ফসলের ফলন ও উৎপাদন এমনটাই ধারনা স্থানীয়দের।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাসার জানান, মাটির সুস্বাস্থ্যের জন্য জৈব সার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জৈব সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদনকারীদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে থাকে। মধুপুরের অনেক নারীরাই নিজের সংসারের কাজের পাশাপাশি কেঁচো জৈব উৎপাদন করে নিজে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জমিতে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে মধুপুর গড়ের কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাবে। নারীরাও এগিয়ে যাবেন এমনটাই জানালেন এই কর্মকর্তা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।