জুমবাংলা ডেস্ক: টাঙ্গাইলের পাহাড়ি এলাকায় দিন দিন হাইব্রিড করলা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও সময়মতো পরিচর্যা করার কারণে এ বছর ফলনও ভালো হয়েছে। এতে করে স্থানীয়দেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় করলা চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এ সব করলা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, জেলার ঘাটাইল, মধুপুর, সখীপুর, ধনবাড়ীসহ আশপাশের পাহাড়ি এলাকায় লেবু, বেগুন, সরিষা, কলাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়। অল্প সময়ে দ্বিগুণ ফসল পাওয়ায় কয়েক বছর যাবত করলা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও করলার মাচায় অন্যান্য ফসল চাষ হওয়ায় এক খরচে একাধিক ফসল পাওয়া যায়। করলা চাষের আড়াই মাস পর থেকে ফলন আসা শুরু করে। এক বিঘা জমি (৩৩ শতাংশ) থেকে দুই থেকে তিন দিন পরপর ১৫ থেকে ১৮ মণ করে করলা পাওয়া যায়। প্রতি মণ করলা দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। এ সব এলাকার উৎপাদিত করলা ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, কুমিল্লা, সিলেট, বগুড়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হয়।
জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গত বছর জেলায় ৬৫৫ হেক্টর জমিতে করলার চাষ হয়। ৮ হাজার ৭৬১ মেট্রিক টন করলার উৎপাদন হয়।
সরেজমিন ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়ক ও বিভিন্ন ফসলি জমির পাশে এই হাইব্রিড করলার চাষ করা হয়েছে। করলা পচনরোধে মাচা তৈরি করা হয়েছে। ফলন ও গাছ ভালো রাখতে নিয়মিত সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানি দেওয়া হয়।
ঘাটাইল উপজেলার শহর গোপিনপুর আশাইরাচালা গ্রামের কৃষক জামাল মিয়া বলেন, ‘আগে আমি যে জমিতে কলা, বেগুন, সরিষাসহ অন্যান্য ফসল চাষ করতাম। সেই ৪৫ শতাংশ জমিতে এবার করলার চাষ করেছি। এতে আমার সব মিলে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হবে। দুই তিন দিন পরপর সেই জমি থেকে ২০ থেকে ২৫ মণ করলা উঠে। প্রতি মণ দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারছি। এতে আমার সব মিলে প্রায় চার লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব। অতি অল্প সময়ে ভালো পাওয়ায় এই করলা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এছাড়াও পরবর্তীতে করলার মাচায় লাউ ও সিমের চাষ করা যায়। এতে মাচার খরচ বেচে যায়।’
ওই গ্রামের রবি খান বলেন, ‘আমার ৩০ শতাংশ জমিতে করলার বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছি। ফলনের ধারা অব্যাহত রাখতে পোকা মাকড় দমনে সপ্তাহে প্রায় আড়াই হাজার টাকা ওষুধ দিতে হয়। এছাড়াও গাছ ও ফলনের গুণগত মান ভালো রাখতে দুই হাজার টাকার মতো ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ সার দেওয়া হয়। এই করলায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় খরচ কম লাভ বেশি হয়।’
কৃষক মেছের আলী বলেন, ‘আমার ৫০ শতাংশ জমিতে করলার চারা রোপনের পর আড়াই মাস থেকে ফলন শুরু হয়েছে। সাড়ে তিন থেকে ফলন পুরোদমে হচ্ছে। আরও প্রায় দুই মাস করলা তুলতে পারব। এতে আমার কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বেকারদের কাজের সুযোগ হচ্ছে। স্থানীয় ও দূর-দুরান্তের পাইকাররা এসব করলা কিনে পিকআপ ও ট্রাক যোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করে।’
পাইকারি ব্যবসায়ী আকতার আলী ও বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এ সব করলার চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় চাষীদের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা মণ করলা কেনা যায়। এসব করলা ঢাকা, কুমিলা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করি। এতে আমাদের লাভ ভালোই হয়।’
ঘাটাইল উপজেলা কৃষি অফিসার দিলশাদ জাহান বলেন, ‘করলা চাষীদের উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে সকল বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।