জুমবাংলা ডেস্ক : টাঙ্গাইলের শাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির ঘটনায় বাংলাদেশে ‘বিস্ময়ের মধ্যে’ করণীয় ঠিক করতে বৈঠক ডেকেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর।
আজ রবিবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বেলাল হোসেন। এ নিয়ে বৈঠকে বাংলাদেশের পরবর্তী করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি ভারতকে দেওয়ার স্বীকৃতির বিষয়ে আপত্তি ও প্রতিবাদ জানানোর কথা ভাবছে অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বেলাল হোসেন বলেন, “বৈঠকে খুব সম্ভবত ভারতের দাবির প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।”
তিনি বলেন, “গত বৃহস্পতিবার ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আমাদের টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই দাবির পরের দিন আমাদের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন থাকায় আমরা কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারিনি।
“তবে আমরা এরই মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে অধিদপ্তরে বৈঠক ডেকেছি। বৈঠকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে আমাদের মহাপরিচালক ও সচিব মহোদয়কে জানানো হবে।”
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশের ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ না থাকায় প্রায়ই বাংলাদেশ কয়েকটি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি হারাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় শত শত বছরের ঐতিহ্যের টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি দাবি করে সেটির স্বীকৃতি নিজেদের পক্ষে নিয়েছে প্রতিবেশী দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।
এ খবর জানাজানি হওয়ার পর টাঙ্গাইলে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা মানববন্ধন থেকে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি বাংলাদেশের করার দাবি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই দাবি করে ভারত সরকার। ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও) এর কাছ থেকে অনুমোদনও পেয়ে যায় তারা। এক মাস আগেই পণ্যটিকে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া, পূর্ববর্ধমানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ভারতের এই পদক্ষেপে বিস্মিত ১৯৮২ সাল থেকে টাঙ্গাইল শাড়ি এবং তাঁতিদের নিয়ে কাজ করে আসা মুনিরা এমদাদ।
তিনি বলেন, “বসাকরাই তো এখনও টাঙ্গাইলে শাড়ি বুনছেন। এখনো হাজার হাজার বসাক তাঁতি আছেন এখনো। ভারতে কিছু বসাক শাড়ি বুনলে সেটা ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ হতে যাবে কেন?”
আসল ঘটনা তুলে ধরতে পারলে ডব্লিউআইপিওর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সুযোগ রয়ে গেছে বলে মনে করেন এই শাড়ি ব্যবসায়ী।
পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বেলাল হোসেন বলেন, “টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ভারত বা পশ্চিমবঙ্গের দাবি কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। বিগত একশ বছরেরও বেশি পুরনো টাঙ্গাইলেই উৎপাদিত পণ্য।
“এই পণ্য বিশেষ কোনো পরিবারের ওপর নির্ভর হতেই পারে না। এই পণ্যের নামের সঙ্গে ‘টাঙ্গাইল’ বা একটি এলাকার নাম জুড়ে আছে। ওই এলাকার কেউ ভারতে চলে গেলে ওই এলাকা তো আর নিয়ে যেতে পারেনি। টাঙ্গাইল যেমন ভারতের নয়, টাঙ্গাইল শাড়িও তেমন ভারতের নয়।”
জিআই হচ্ছে কোনোও একটি পণ্যের ভৌগলিক নির্দেশক। কোনো পণ্যের একটি নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থল দিয়ে এর খ্যাতি ও গুণাবলী নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। জিআই চিহ্নিত করতে উৎপত্তিস্থলের নাম যেমন- শহর, অঞ্চল বা দেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বৈশ্বিকভাবে এই জিআই বা পণ্যের স্বত্ত অনুমোদন দেয় ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও)।
ভারত সরকার প্রকাশিত জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন জার্নালের ২০ ও ২১ নম্বর পৃষ্ঠায় টাঙ্গাইলের শাড়ির বিষয়ে লেখা আছে, কয়েকশ বছর আগে প্রথমে ঢাকার কাছে ধামরাইয়ে এবং পরে টাঙ্গাইল গিয়ে বসাক পদবিধারী কিছু তাঁতি টাঙ্গাইল শাড়ি শিল্প গড়ে তোলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বসাকদের একটি অংশ ভারতে পাড়ি জমান। তারা পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া, বর্ধমান এবং দক্ষিণ দিনাজপুরসহ বেশ কিছু জায়গায় শাড়ি তৈরির তাঁত স্থাপন করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।