টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই’র জন্য মামলা হবে ভারতে

জুমবাংলা ডেস্ক : নতুন করে বাংলাদেশের ১৪টি পণ্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদ পেলো। একই সঙ্গে টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে ভারতের আদালতে মামলা করা হবে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিসেস একাডেমিতে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের সনদ বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। এখন জিআই সনদ পাওয়া পণ্যের সংখ্যা হলো ৩১টি।

সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে জিআই হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ দেয়া হয়, টাঙ্গাইলের শাড়ি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মণ্ডা, যশোরের খেজুরের গুড়, রাজশাহীর মিষ্টি পান এবং জামালপুরের নকশিকাঁথা। এছাড়া, জার্নাল প্রকাশ করা হয়েছে একটি পণ্যের। জার্নালে প্রকাশের জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে ৭ টি পণ্য এবং আরও ২৩ টি পণ্যের জিআই আবেদন পর্যালোচনাধীন রয়েছে। অন্যদিকে ১০ পণ্যের জিআই আবেদন বাতিল করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে মামলায় যাচ্ছে বাংলাদেশ
টাঙ্গাইল শাড়ির উত্পত্তি পশ্চিমবঙ্গে দাবি করে, গত ২ জানুয়ারি নিজেদের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত। এরপর বাংলাদেশ নড়েচড়ে বসে। ডিপিডিটি’র কাছে গত ৭ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই সনদের আবেদন করে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক। সব কিছু যাচাই করে বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সনদ দেয় ডিপিডিটি।

ডিপিডিটির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, এখন পরের ধাপ হলো ভারত যেনো টাঙ্গাইলের শাড়ি জিআই দাবি প্রত্যাহার করে নেয়। সে চেষ্টাই করছে ডিপিডিটি’র কর্মকর্তারা। এজন্য ভারতের হাইকোর্টে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে মামলা করা হচ্ছে। দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দেশটির আইনী সেবা প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাশন এন্ড এসোসিয়েট’কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এতে বাদি হবেন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক। মামলা করতে সাহায্য করছে শিল্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাই কমিশন। দ্রুতই ভারতের হাইকোর্টে মামলা করা হবে। মামলার রায় যদি বাংলাদেশের বিপক্ষে চলে যায়, তাহলে জাতিসংঘের অধিনস্ত প্রতিষ্ঠান বিশ্ব মেধা সম্পদ সংস্থা বা ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশনে (ডাব্লিউআইপিও) অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ রয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, টাঙ্গাইলের শাড়ি আমাদের ছিল, আমাদেরই থাকবে। এজন্য সব ব্যবস্থাই করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে জিআই পণ্যের প্রচার ও প্রসারে আমাদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশন, দেশের সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেলায় জিআই পণ্যসমূহ প্রদর্শন করা যেতে পারে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপিডিটি, বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এসব পণ্যের প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে পণ্যের গুণগত মান ধরে রেখে কিভাবে আরও উন্নত করা যায় সে চেষ্টা করতে হবে।

সনদ বিতরণী অনুষ্ঠানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে এমন ৫০০টি পণ্যের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। একটু দেরিতে হলেও আমরা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় আমরা ২০১৩ সালে ‘ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন প্রণয়ন করি। পরে ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করি। আমাদের জিআই পণ্যকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং একইসঙ্গে এর পেটেন্টও দিতে হবে। জিআই পণ্যের প্রচার-প্রসারে বিভিন্ন উত্সব, পালাপার্বণ ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এসব পণ্যকে আমরা উপহার হিসেবে দিতে পারি। একই সঙ্গে জিআই পণ্যগুলোর প্রসারে টিভিসি, ডকুমেন্টারি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবস্থা প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ডিপিডিটির মহাপরিচালক মুনিম হাসান, ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফী বিনতে শামস, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা প্রমুখ।

জিআই স্বীকৃতি পেল ‘রাজশাহীর মিষ্টি পান’