নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : টানা বৃষ্টির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন চট্টগ্রামের এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ কর্মজীবী মানুষ। আজ সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাতে নগরীর অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এ অবস্থায় রাস্তায় বের হয়ে যানবাহন না পেয়ে কোনো কোনো পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
অন্যদিকে নগরীর বায়েজীদ এলাকায় একটি নির্মাণাধীন দেয়ালের অংশ ধসে এক নারী আহত হয়েছেন।
সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নগরীতে ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ছয় ঘণ্টার গাণিতিকভাবে হিসাব দিলেও বাস্তবে সকাল ৮টায় বৃষ্টি শুরু হয়ে ১০টা পর্যন্ত টানা হয়েছে। এই দুই ঘণ্টায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের যেহেতু সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের আগে পরীক্ষার হলে প্রবেশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই তারা ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। আর রাস্তায় বেরিয়ে গাড়িসংকটে পড়েন পরীক্ষার্থীরা।
সাগরে লঘুচাপের কারণে সকালের টানা বর্ষণে নগরীর চকবাজার কেবি আমান আলী রোড, ডিসি রোড, বগার বিল, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, জাকির হোসেন রোডের ওয়ার্লেস মোড় ও খুলশী রেলগেট, অলংকার মোড় প্রভৃতি এলাকায় হাঁটুসমান পানি জমেছে। তবে সাগরে ভাটা থাকায় পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়নি।
এদিকে বৃষ্টিতে নগরীর বায়েজীদ বোস্তামী থানাধীন কলাবাগান এলাকায় নির্মাণাধীন একটি দেয়াল ধসে জেসমিন আক্তার (৪০) নামের এক নারী গতকাল সকাল ৮টার দিকে আহত হয়েছেন।
এর আগে গত ২৭ মে একই দেয়ালের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় স্থানীয় সাইফুল ইসলাম (২৬) নামের এক যুবক দেয়ালচাপায় মারা গিয়েছিলেন। এই দেয়ালটি তখন ভেঙে ফেলা হলেও একটি অংশ রয়ে গিয়েছিল, সেই অংশটি গতকাল ভেঙে পড়ে।
টানা ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট ও অলিগলি। বৃষ্টিতে নগরের চকবাজারের কাঁচাবাজার, মুহাম্মদ শাহ আলী লেন, হাসমত মুন্সেফ লেন, কাপাসগোলা, বাকলিয়ার ডিসি সড়ক এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে।
নগরের বাকলিয়ার কালামিয়া এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, এলাকার রাস্তাঘাট যেখানে উঁচু করা হয়েছে, সেখানে কম পানি উঠেছে। আর সড়ক যেখানে আগের মতো রয়েছে, সেখানে হাঁটুর ওপরে পানি জমেছে। এতে দৈনন্দিন কাজে যেতে দুর্ভোগে পড়তে হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রামের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদের এক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও গত শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় প্রতিদিন ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার এবং ২৮৯ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে।
ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও বান্দরবনের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রামে বৃষ্টি হলেই আতঙ্ক বাড়ে পাহাড়ে। নগরীর ২৬টি পাহাড়ে অবৈধভাবে প্রায় ছয় হাজারের বেশি পরিবার রয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের পাহাড় থেকে সরিয়ে আনতে কাজ করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। এ ছাড়া পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায়ও পাহাড়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে।
মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার পাশাপাশি সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাতে পাহাড়ধসের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আলী আকবর খান বলেন, রোববার (৩০ জুন) ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় চট্টগ্রামে। এসময়ে ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, সকালে চন্দ্রনগর কলাবাগান এলাকায় দেয়াল ধসে এক নারী পায়ে আঘাত পান। তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চলমান এই বৃষ্টিপাত আরও তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, নগরে ২৬টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে। এসব পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি পরিবার বসবাস করছে। যেখানে শিশু, বৃদ্ধসহ বসবাসরত মানুষের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশ মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার পাশাপাশি সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাতে পাহাড়ধসের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ, বিদায়ী অর্থবছরে এসেছে ২৪ বিলিয়ন ডলার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।