অনিল চন্দ্র রায়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: টানা এক সপ্তাহ ধরে কুড়িগ্রামে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। ২০ জানুয়ারির পর হতে ক্রমেই তাপমাত্রা কমতে থাকে এ জেলায়। ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় শৈত্যপ্রবাহ। কখনো মাঝারী আবার কখনো মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে চলছে সপ্তাহ জুড়ে। তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেনি এসময়। মাঝে দুই-তিন দিন কুয়াশা কম থাকায় ১০টার পর সূর্যে দেখা মিলেছে।
আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) হঠাৎ করেই আবার ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে চারদিক। সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক শূণ্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র রায় জানান, কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের শৈত্য প্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, আজ এবং আগামী দুইদিন হালকা বৃষ্টি বা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এ জেলায়। এর আগে ২৫ জানুয়ারি শুক্রবার দেশের সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিল কুড়িগ্রামে। সেদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই শীতে প্রথম দফার শৈত্যপ্রবাহ চলমান রয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের মতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে আকেরটি শৈত্যপ্রবাহ হানা দিবে এ জেলায়। ইতোমধ্যে দফায় দফায় শৈত্য প্রবাহে দুর্বিসহ জীবন পার করছে কুড়িগ্রামের মানুষ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন। বিশেষ করে নদীপাড়, চরা ল এবং নিন্ম আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। এছাড়াও ভোগান্তিতে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরাও। শিশু ও বৃদ্ধারা আক্রান্ত হচ্ছে নিউমেনিয়া, ডাইরিয়া, সর্দি-কাশিসহ শীতজনিত রোগে। ২৫ জানুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় রৌমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আতিকুল ইসলাম নামে ৯ মাস বয়সের এক শিশু রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোমেনুল ইসলাম জুমবাংলাকে জানান, তীব্র ঠাণ্ডার কারণে রৌমারীতে রোটা ভাইরাসের আক্রমণ দেখা দিয়েছে।
ওই হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহে ৬৪ জন শিশু এবং ১৯ জন বৃদ্ধ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। এছাড়াও প্রায় আড়াই শতাধিক রোগী বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে।
কুড়িগ্রামের জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গেল সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ জন শিশু ও বৃদ্ধ ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২শ থেকে ৩শ বর্হিবিভাগ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কুড়িগ্রামের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঠাণ্ডায় চরম বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী ও ছিন্নমুল মানুষসহ পশুপাখি। ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডায় বিশেষ কাজ ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না অনেকেই। শীতের কারণে কুড়িগ্রামের নদনদী তীরবর্তী, চরাঅঞ্চলসহ প্রান্তিক মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। শীতের কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে চলতি মৌসুমের ইরি-বোরো আবাদ। কৃষকেরা ইরি-বোরো ক্ষেত হাল চাষ করে প্রস্তুত করলেও প্রচন্ড ঠাণ্ডায় কারণে চারা লাগাতে পারছেন না। কৃষকেরা জানিয়েছেন, ঠাণ্ডায় চারা লাগালে তা শিকড় ছাড়তে পারে না ফলে চার মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই শীত কমলে চারা চাষ শুরু করতে হবে।
জেলার কৃষি উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান জুমবাংলাকে জানান, এবার ১ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ পর্যন্ত ৬৩ হাজার শীতবস্ত্র, ১৫০০ শিশু পোশাক এবং দু’হাজার শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জুমবাংলাকে জানান, সরকারের নিদের্শনা অনুযায়ী শীতে মানুষ যাতে দুর্ভোগে না পড়ে সে মোতাবেক আমরা কাজ করছি। শীতবস্ত্র বিতরণে মনিটরিং করাসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীতবস্ত্র সমন্বয় করে বিতরণ করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।