জুমবাংলা ডেস্ক : মাহফুজুর রহমান নবীন। বয়স ২৮ বছর। এই বয়সেই তিনি যেসব অপরাধ করেছেন, তার তালিকা শুনে তাজ্জব বনে গেছেন আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।
নবীনের কাছ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, মিডিয়াকর্মী, সেলিব্রেটি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী, প্রবাসী, চাকরিজীবী, গৃহিণী থেকে কেউই বাদ যায়নি। অভিনব প্রতারণা মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বা অশ্লীল ছবি-ভিডিও তৈরি করে অনেক নারীর সর্বনাশ ডেকে এনেছেন। নবীন অনেকেরই ভেঙেছেন সংসার ও প্রেম। চাহিদামতো টাকা দিয়ে অনেকে নীরবে প্রতারণা থেকে নিস্তার পেয়েছেন।
সর্বশেষ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের উপস্থাপিকার আইডি হ্যাকের সূত্র ধরে তাকে ধরতে অভিযানে নামে র্যাব। ধরা পড়ার আগে নবীন ব্যস্ত ছিলেন চিত্রনায়িকা আরিফা জাহান মৌসুমী ও শিল্পী কৌশিক হাসান তাপসের আইডি হ্যাকের চেষ্টায়।
দীর্ঘ ফাঁদ পেতে গতকাল বুধবার হবিগঞ্জের বাহুবল থেকে তাকে আটক করা হলেও ব্যাপারটি গণমাধ্যমকে আজ বৃহস্পতিবার জানায় র্যাব-৯।
নবীনের অপরাধের নমুনা বর্ণনা দিতে গিয়ে অভিযানের নেতৃত্বে থাকা র্যাবের এএসপি আনোয়ার হোসেন জানান, আর দশটা সাইবার অপরাধীর চেয়ে সব দিক থেকেই আলাদা নবীন। নিজের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কোনো আইডি নেই। প্রতারণা করতে কখনো তিনি র্যাব কর্মকর্তা, কখনো রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কখনো বা একেবারেই আমজনতা। বিভিন্ন আইডি হ্যাক করে তিনি প্রতারণা ফাঁদ পাততেন। বেশিরভাগ সময় বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য র্যাব কর্মকর্তার আইডি হ্যাক করে ইনবক্সে টার্গেটকৃত ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে নিতেন। র্যাবের ডিএডি পরিচয়ে ফেসবুকে তার অপরাধ সাম্রাজ্য বিস্তৃত করে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, টার্গেট করার ক্ষেত্রে নারীদের বেশি বেছে নিতেন নবীন। আইডি হ্যাক করার পর প্রথমে আইডির মালিককে মানসিক চাপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে আইডিতে থাকা ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্টসহ বিভিন্ন তথ্য অন্যদের পাঠাতেন। টার্গেট ব্যক্তি চাহিদামতো টাকা দিলেও তিনি আইডি ফেরত না দিয়ে আইডির ইনফো পরিবর্তন করে কোনোটাকে সাজিয়ে নেন র্যাব অফিসার, কোনোটাকে আমজনতা হিসেবে। তারপর আইডিগুলো ব্যবহার করে চলে নতুন প্রতারণা।
এএসপি আনোয়ার হোসেন জানান, আমজনতা হিসেবে আইডি থেকে হেল্প চেয়ে পোস্ট দিয়ে তাতে র্যাব অফিসার আইডি থেকে কমেন্ট করে ইনবক্স কথা বলতে অনুরোধ করা হয়। প্রকাশ্যে কথা বলা বারণ! কয়েক দিন পর প্রথম আইডি থেকে পোস্ট করে বলা হয়, ওমুক র্যাব অফিসার তার দখলি জমি বা হারানো মোবাইল উদ্ধার করে দিয়েছে। এরপর ওই র্যাব অফিসার আইডিতে বিভিন্নজন তাদের সমস্যার কথা বলতে শুরু করেন। তখন র্যাব অফিসারের আইডি থেকে ইনবক্সে সহযোগিতা করার বিনিময়ে টাকা চাওয়া শুরু হয়।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, এভাবে কিছুদিন এক আইডি দিয়ে অপরাধ সংঘটনের পর নবীন সেই আইডি ডিজেবল করে দিয়ে নতুন আরেক আইডির মাধ্যমে কাজ শুরু করেন। এমনকি টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো সহজ ক্লু রাখতেন না নবীন। টাকা নিতেন কয়েক হাত ঘুরে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে। তার মোবাইল নাম্বার তিনি কাউকে দিতেন না।
র্যাবের এএসপি জানান, নবীন বিশেষ করে নারীদের সঙ্গে এতোটাই ভয়ংকর আর নোংরা আচরণ করতেন যে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা তাকে আটকের পরও কথা বলতে চান না। কারণ তিনি তাদের ব্যক্তিগত অনেক তথ্যই হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া ভিডিও এডিটিংয়ে দক্ষ নবীন বিভিন্ন নারীর মুখ ব্যবহার করে অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে নিয়েছেন। তবে জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতারণার শিকার অনেক প্রবাসী যোগাযোগ করছেন।
র্যাবের দাবি অনুযায়ী, আটক নবীন অসংখ্য নারীকে টার্গেট করে অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে তাদের চরিত্র হনন এবং তাদেরকে ব্ল্যাকমেইলিং এ জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তিনি স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করে ভেঙে দিতেন দীর্ঘ দিনের সাজানো সংসার। টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ফরমায়েশ নিয়েও তিনি এসব কাজ করতেন।
নবীনকে আটকের পর র্যাব হবিগঞ্জের বাহুবল থানায় হস্তান্তর করে সাইবার আইনে মামলা করেছে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯, সিপিসি-১ কোম্পানির (সিলেট ক্যাম্প) একটি আভিযানিক দল এএসপি আনোয়ার হোসেন, এএসপি সত্যজিৎ কুমার ঘোষ, এএসপি নাহিদ হাসান এবং এএসপি খালেকের নেতৃত্বে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলের আব্দুল্লাহপুর গ্রাম থেকে তাকে আটক করে।
মাহফুজুর রহমান নবীন হবিগঞ্জের বাহুবলের তিতারকোণা গ্রামের মৃত ইজাজুর রহমানের ছেলে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।