টিউব ওয়ার্ম থেকে ডলফিন: সমুদ্র ও বনজীবনের বিস্ময়কর প্রাণীরা

ডলফিন
সেন্ট মার্টিনে এক ধরনের অমেরুদণ্ডী প্রাণী আছে যারা বাস করে একধরনের টিউব বা নলের ভেতর। নাম টিউব ওয়ার্ম। এরা কোনো কিছুর পৃষ্ঠদেশে, যেমন পাথর বা ঝিনুক, এমনকি অন্য ওয়ার্মের টিউবের সঙ্গেও লেগে থাকে। দেহ খণ্ডায়িত। দেহের চারদিকে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের স্থায়ী ও প্রতিরক্ষামূলক নলাকার আবরণ তৈরি করতে পারে। এবারে সুন্দরবনের কথা বলি।
ডলফিন

সুন্দরবন বাংলাদেশের আরেকটি অনন্য বাস্তুতন্ত্র। এ অঞ্চলে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ছোট-বড় নদী-নালা ও খাল। বাস্তুসংস্থান ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি বঙ্গোপসাগরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মাছ, চিংড়ি ও কাঁকড়ার প্রজনন ও লালনক্ষেত্র। সুন্দরবনের জলাভূমি থেকে এ পর্যন্ত ৩২০ প্রজাতির মাছ; ৬৫ প্রজাতির চিংড়ি ও কাঁকড়া; ৫৪ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক; ৭ প্রজাতির উভচর; ২৪ প্রজাতির সরীসৃপ; ৪ প্রজাতির জলজ স্তন্যপায়ী, তথা ডলফিন; ৭২ প্রজাতির জলজ বা আধা জলজ পাখি; ২৮ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল; ১১০ প্রজাতির উদ্ভিদ প্লাঙ্কটন এবং ৪৪ প্রজাতির প্রাণী প্লাঙ্কটন পাওয়া গেছে।

এ বনে বাটাগুর বাসকা নামে এক প্রজাতির কাছিম পাওয়া যায়। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেই মহাবিপন্ন। দুনিয়ার অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে প্রজাতিটি একসময় দেখা গেলেও বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলা হয়। এরা সুন্দরবনের কেওড়া ফল খায় আর বীজ বনের নানা জায়গায় ছড়িয়ে দেয়। এভাবে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে কাছিম বিশেষ ভূমিকা রাখে।

সুন্দরবনের যেসব বন্য প্রাণী ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে, সেসবের মধ্যে অন্যতম কুমির। সুন্দরবনে কুমির দেখার উপযুক্ত সময় হলো শীত মৌসুম। সাধারণত সকালের দিকে ভাটার সময় কুমির নদী বা খালের পাড়ে রোদ পোহায়। বিকেলেও ভাটা থাকলে কুমিরকে নদী বা খালের পাড়ে বিশ্রামরত অবস্থায় দেখা যায়।

এ রকম গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় অঞ্চলটির নাম সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড। এটি আসলে ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার বিস্তৃত বঙ্গোপসাগরের একটি গভীর খাদ। এটি সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এই গভীর খাদের গড় গভীরতা প্রায় ১ হাজার ২০০ মিটার। মৎস্য প্রজাতির পাশাপাশি স্থানটি ৫ প্রজাতির তিমি ও ৮ প্রজাতির ডলফিনের বাসস্থান ও প্রজননক্ষেত্র। ডলফিন ও তিমিদের অনেক প্রজাতি দেখা যায় এ অঞ্চলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বোতলনাক ডলফিন, ইরাবতী ডলফিন, ঘূর্ণি ডলফিন, গোলাপি পিঠকুঁজো ইন্দো-প্যাসিফিক ডলফিন, মসৃণ পিঠের ডলফিন (পাখাহীন), ব্রাইডিস বা বলিন তিমি, গন্ডার তিমি বা শুক্রাণু তিমি ও ঘাতক তিমি।

সেন্ট মার্টিন ও সুন্দরবনের বিপুল এই জীববৈচিত্র্য যে শুধু আমাদের মুগ্ধ করে, তা-ই নয়। এগুলো পরিবেশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা তাই এ অঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্যকে বোঝার পাশাপাশি সংরক্ষণেরও চেষ্টা করছেন। নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে এ জন্য। তবে এসব অঞ্চলে, বিশেষ করে সেন্ট মার্টিনে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদেরও এ ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা যাবে না। নষ্ট করা যাবে না এসব অঞ্চলের সৌন্দর্য। নাহয় একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে এসব প্রাণী। এর প্রভাব পড়বে মানুষের ওপরও।