রাশেদ রাব্বি : করোনার টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় আপ্যায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস রোধে ভ্যাকসিন দেয়ার কাজ করবেন ৬২ হাজার ৪০০ কর্মী। তাদের দুপুরে খাওয়ার জন্য ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এটা অপ্যায়ন ব্যয় হিসেবে দেখানো হয়েছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এতে কোভিড-১৯ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হয়। সেখানে টিকার জন্য ১৫৮৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার হিসাব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি কোডে ৭৪৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা অর্থ বিভাগ থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. মো. শামসুল হক যুগান্তরকে বলেন, এই আপ্যায়ন ব্যয় মানে চায়ের বিল নয়। টিকা দেয়ার জন্য সারা দেশে ১০ হাজার ৪০০ টিম করা হবে। প্রতি টিমে ৬ জন করে লোক থাকবে, অর্থাৎ মোট ৬২ হাজার ৪০০ জন কাজ করবেন। যার মধ্যে দু’জন টিকা দেবেন, অন্যরা রেজিস্টার মেইনটেন, লাইন ঠিক রাখা ইত্যাদি কাজ করবেন। এদের জন্য কোনো ভাতার ব্যবস্থা নেই। শুধু দুপুরে খাবার বাবদ ২০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেটাই এখানে আপ্যায়ন ব্যয় হিসাবে দেখানো হয়েছে।
জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে দেশে করোনাভাইরাসের টিকা আসবে তিন কোটি ডোজ। তবে একসঙ্গে আসবে না, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ৬ মাসে তিন কোটি টিকা দেশে আসবে। এজন্য দেশব্যাপী করোনা টিকা কার্যক্রমও চলবে ছয় মাস ধরে।
অর্থাৎ, যে ১০ হাজার ৪০০ টিম করা হয়েছে, তারা প্রতি মাসে ১২ দিনে ৫০ লাখ টিকা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রয়োগ করবে। এভাবে প্রতি মাসে ১২ দিন করে ৬ মাসে মোট ৭২ দিন টিকাদান কার্যক্রম চলবে। প্রতি টিমে ৬ জন করে হলে মোট টিকাদান কর্মীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৬২ হাজার ৪০০ জন। দুপুরের খাবার বাবদ জনপ্রতি ২০০ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
করোনার টিকা কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে পাঠানো চিঠিতে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। হায়ারিং চার্জ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এই টাকা ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগ বরাদ্দ দিয়েছে। প্রচার ও বিজ্ঞাপন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। পণ্যের ভাড়া ও পরিবহন ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৩ কোটি ৩০ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। ব্যবস্থাপনা ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি দুই লাখ টাকা।
টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ভ্রমণ ব্যয় ৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৯ হাজার টাকা। টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে চিকিৎসা ও শল্যচিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জামাদি বাবদ ব্যয় ৫৮ কোটি ৫৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। স্বাস্থ্য বিধান সামগ্রী বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
ওষুধ ও প্রতিষেধক অর্থাৎ টিকা কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৭১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে এই খাতে ৬৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এছাড়া এ সংক্রান্ত কাগজপত্র মুদ্রণ ও বাঁধাই বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ২৬ লাখ এক হাজার টাকা। এই খাতের সম্পূর্ণ টাকাই ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
টিকা প্রদান সংক্রান্ত জরিপ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ লাখ টাকা। টিকাদানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সম্মানী বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। চিকিৎসা ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। প্রকৌশলী ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি বাবদ ব্যয় ১৩ কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এই টাকা পুরোটাই ইতোমধ্যে বরাদ্দ করেছে অর্থ বিভাগ।
এছাড়া টিকা প্রদান সংক্রান্ত ডাটাবেজ করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে টিকা কেনা এবং টিকা প্রদান সংক্রান্ত মোট ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৪ লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা।
৩০ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে এক চিঠি দেন। এতে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের (অক্সফোর্ড এস্ট্রাজেনিকা) জন্য যেসব সেবা পণ্য পরিচালক সিএমএসডির মাধ্যমে কেনা হবে, সেক্ষেত্রে পরিচালক ক্রয়কারীর দায়িত্ব পালন করবে। একইভাবে যেসব সেবা পণ্য লাইন ডিরেক্টর এমএনসিএন্ডএইচএর মাধ্যমে কেনা হবে, সেক্ষেত্রে এমএনসিএন্ডএইচএর লাইন ডিরেক্টর ক্রয়কারীর দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়া ভ্যাকসিন ও অন্যান্য সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে পিপিএ-২০০৬ এবং পিপিআর-২০০৮ অনুসরণপূর্বক ৫ সদস্যের চাহিদা নিরূপণ কমিটি গঠনের বিষয় উল্লেখ করেন তিনি।
এক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক পণ্য যেমন: কোল্ড চেইন ইকুইপমেন্ট, এডি সিরিঞ্জ, সেফটি বক্স, এইএফআই কিট বক্স, এইএফআই ফরমস, সার্জিক্যাল মাক্স, সেনিটাইজার, পিপিই, ইনফেরার্ড থার্মোমিটার, পয়েন্টিং ম্যাটেরিয়ালস, আইস প্যাক, ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার, কোল্ড বক্স, আইস লাইনার রেফ্রিজারেটর, পুশিং ফ্রিজ ইনডিকেটর, ফ্রিজ ট্যাগ, সেফটি বক্স ইত্যাদি চাহিদা এই কমিটি নিরূপণ করবে।
প্রসঙ্গত, ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতার নিশ্চয়তা, গুণগতমান, কার্যকারিতা এবং সংরক্ষণের জন্য তাপমাত্রা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং এস্ট্রাজেনিকার যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকসিন কিনতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভ্যাকসিনের প্যাটেন্ট নিয়ে কাজ করা সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া থেকে ভ্যাকসিন কেনা হবে।
প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।