জুমবাংলা ডেস্ক: গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় কোরবানীর ঈদ কেন্দ্রীক গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন,টুঙ্গিপাড়ার ছোট গৃহস্থ্য বাড়িতে ২টি গরু মোটাতাজা করে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা আয় করেছেন। বড় গৃহস্থ্য ৫টি পর্যন্ত গরু মোটা তাজা করে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ পেয়েছেন। লাভের টাকায় তাদের সারা বছরের পারিবারিক খরচ উঠে এসেছে।
এছাড়া গরু ক্রয় ও বিক্রয়ের সাথে জড়িতরাও আয় করেছেন লাখ লাখ টাকা। গরু কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গ্রামীণ অর্থনীতি এখন চাঙ্গা।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ বিশ্বাস জানান, এ বছর টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ২ হাজার ৭৯১টি গরু মোটাতাজা করা হয়। প্রতিটি গরুর দাম ধরা হয়েছে গড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৫৫ কোটি ৮২ লাখ টাকার পশু কেনাবেচা হয়েছে। ২ টি গরু পালনকারী ১ লাখ টাকা ও ৫টি গরু পালনকারী আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ করেছে। এছাড়া বাণিজ্যিক খামার গুলোতে ভাল লাভ হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, এই উপজেলায় অন্তত ৫শ’ পরিবার ৭ বছর ধরে গৃহপালিত পশুর সাথে ২টি থেকে ৫টি পর্যন্ত কোরবানীর গরু মোটাতাজা করে আসছেন। মাঠে চড়িয়ে এসব গরু তারা লালন পালন করেন।
এছাড়া জমিতে উৎপাদিত ধানের খড়, ধান ভাঙ্গানো কুড়া, গমের ভূষি, চিটা ও খৈইল দিয়ে গরু মোটাতাজা করেন। তারা খুব কম খরচে গরু মোটাতাজা করেন। হাট-বজারে টুঙ্গিপাড়ার গৃহপালিত মাঝারি সাইজের এসব দেশী গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফড়িয়া, দালাল ও ক্রেতারা গৃহস্থ্যের কাছ থেকে সরাসরি গরু কিনে নিয়েছেন। তারা এ গুলো টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী, বাঁশবাড়িয়াসহ আশপাশের গরুর হাটে বিক্রি করেছেন। এ বছর মাঝারি সাইজের দেশীয় গরুর চাহিদা সবেচেয়ে বেশি। এ গরু প্রতিটি ৯০ হাজার থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার তারাইল গ্রামের কৃষক হারান মল্লিক (৫০) বলেন, এ বছর ২টি গরু মোটতাজা করেছি। ১ লাখ ২৫ হাজার করে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ২টি গরু বিক্রি করেছি। এতে আমার অন্তত ১ লাখ ১০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এ টাকায় আমার সারা বছরের সংসার খরচ চলে যাবে। এছাড়াও সংসারের প্রায়োজনীয় সব খরচ এখন এখান থেকে মেটাতে পারছি। আমাদের গাভীর সাথেই এ গরু মোটাতাজা করি। কোরবানীর সময় এগুলো বিক্রি করে দেই। আবার পৌস মাসের দিকে দেশীয় শংকর জাতের গরু কিনে কোরবানীর জন্য মোটাতাজা করি। এভাবে ৭ বছর ধরে গরু মোটাতাজা করছি। এতে আমরা ভাল আছি।
টুঙ্গিপাড়ার ডুমরিয়া গ্রামের গরু পালনকারী আরজ আলী বলেন, আমাদের এলাকা বিল বেষ্টিত। শুস্ক মৌসুমে বিলে গরু চড়াই। বর্ষা মৌসুমে বিলের পানিতে এক ধরণের ঘাস জন্মে। এ ঘাসের সাথে , খর, গমের ভূষি, চিটা, খৈইল দিয়ে গরু মোটাতাজা করি। গরু মোটাতাজা করতে আমাদের তুলনামুলকভাবে খরচ কম লাগে। তাই গরু বিক্রি করে ভালই লাভ থাকে। বাড়িতে বসেই আমরা গরু বিক্রি করতে পারি। হাটে যেতে হয় না। কোরবানীর সময় গরু বিক্রি করে ঘরে কাচা তুলতে পেরেছি।
ফড়িয়া মিতুল শেখ (৫০) বলেন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গৃহপালিত পশুর সাথে গরু মোটাতাজা করা হয়। এটি এখন টুঙ্গিপাড়া উপজেলার শতশত পরিবারের পেশায় পরিনত হয়েছে। অর্গানিক পদ্ধতিতে তারা নিরাপদ মাংস উৎপাদন করে। গরুর সাইজ ছোট ও মাঝারি আকৃতির। সব হাটেই এসব গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই আমরা গৃহস্থ্যর কাছ থেকে গরু কিনে নিয়ে হাটে বিক্রি করি। এতে আমাদেরও ভাল টাকা লাভ হয়।
কোরবানীর হাটের ইজারাদার সালাম মোল্লা বলেন, টুঙ্গিপাড়ার গৃহপালিত পশুর চেহারা, বর্ণ, আকার ও আকৃতি খুবই আকর্ষনীয় । তাই হাটে এই গরু আসা মাত্র একটু বেশি দামে বিক্রি হয়। এতে হাট সংশ্লিষ্টদেরও ভাল আয় হয়। সূত্র: বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।