দ্বিতীয়বারের মতো স্থগিত করা হলো প্রথম থ্রিডি প্রিন্টেড রকেট টেরান ১-এর উৎক্ষেপণ। পৃথিবীর প্রথম থ্রিডি প্রিন্টেড রকেটের উৎক্ষেপণ থমকে গেল আবারও। এর আগে, গত ৮ মার্চ, বুধবার রকেটটি উৎক্ষেপণ করার কথা ছিল। তরল অক্সিজেন জ্বালানির তাপমাত্রা সংক্রান্ত একটি সমস্যায় সেটা হয়নি। সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। দ্বিতীয়বারের চেষ্টাতেও কাজ হলো না।
বিষয়টি বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের জন্য দারুণ আনন্দের। কারণটা শুরুতেই বলেছি। টেরান ১ পৃথিবীর প্রথম থ্রিডি প্রিন্টেড রকেট। অর্থাৎ ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ যন্ত্রে এর জটিল সব যন্ত্রাংশ প্রিন্ট করা হয়েছে। আর সব রকেটের মতো করে বানানো হয়নি! যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তি উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান রিলেটিভিটি স্পেস তৈরি করেছে এ রকেট।
রকেটটির দুটো স্টেজ বা ভাগ। প্রথম স্টেজটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৯টি এওন ১ ইঞ্জিন। এটির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় মিথেন ও তরল অক্সিজেন। প্রথম স্টেজের এ ইঞ্জিনটি ১০০ কিলোনিউটন বলে ‘ধাক্কা’ দিতে পারে। রকেট প্রযুক্তির মূল নিহিত এই ‘ধাক্কা’র মধ্যেই। নিউটনের তৃতীয় সূত্র বলে, প্রতিটি কাজের সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া হয়। তাই রকেট উৎক্ষেপণের সময় ইঞ্জিন যে বলে বায়ুকে ধাক্কা দেয়, বাতাস রকেটকে একই পরিমাণ বলে ধাক্কা দেয় ওপরের দিকে। ফলে, রকেট উড়ে যেতে পারে।
যাহোক, রকেটটির দ্বিতীয় ভাগটিতে রয়েছে ভ্যাকুয়ামের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ একটি এওন ১ ইঞ্জিন। এটি ভ্যাকুয়াম বা শূন্যে ১২৬ কিলোনিউটন বলে ‘ধাক্কা’ দিতে পারে।
যেসব রকেটের একাধিক স্টেজ বা ভাগ আছে, সেগুলোর কাজ করার নিয়মটি বেশ মজার। প্রথম ভাগের ইঞ্জিন ও জ্বালানি ব্যবহার করে রকেটটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে পৌঁছে যায় মহাকাশে। সেখানে বাতাস নেই, মানে ভ্যাকুয়াম। আর, এর মধ্যে প্রথম ভাগের জ্বালানিও সব ব্যবহৃত হয়ে গেছে। তার মানে, প্রথম ভাগের ওজনটুকু এখন বোঝা—বাড়তি বোঝা। তাই রকেট থেকে এই ভাগটি এ পর্যায়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন দ্বিতীয় ভাগের ইঞ্জিনটি সে ভাগের জ্বালানি ব্যবহার করে এগিয়ে যায় মহাশূন্যের মাঝ দিয়ে।
টেরান ১ নামের এ রকেটটির পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছাতে লাগবে আট মিনিট। এ যাত্রাপথে নানা তথ্য সংগ্রহ করা হবে। দেখা হবে, এ ধরনের রকেট উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়ার ধাক্কা সামলাতে পারে কি না। এ পরীক্ষা সফল হলে অনেকটা কম খরচে রকেট উৎক্ষেপণ করা যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
এ ছাড়া এটি হবে প্রথম বেসরকারি অর্থায়নে তৈরি যান, যাতে জ্বালানি হিসেবে মিথেন ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রথমবারের এ পরীক্ষায় টেরান ১ রকেট কোনো কার্গো, অর্থাৎ অন্য ভারী কোনো বস্তু বহন করছে না। তবে এটি ১ হাজার ২৫০ কেজি ওজনের বস্তু বহন করতে পারে। রকেটটি ১১০ ফুট লম্বা ও সাড়ে ৭ ফুট ব্যাসের। অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর শঙ্কর ব্যবহার করে থ্রিডি মুদ্রণ পদ্ধতিতে এটি তৈরি করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহার করেছে ‘স্টারগেট’ নামের একটি থ্রিডি প্রিন্টার।
রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বিশ্বে ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ পদ্ধতিতে তৈরি করা বৃহত্তম বস্তু এটি। তাদের লক্ষ্য ছিল রকেটটির ৯৫ শতাংশই থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি করা। এ রকেটটির প্রতি উৎক্ষেপণের খরচ ধরা হয়েছে ১২ মিলিয়ন ডলার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।