আন্তর্জাতিক ডেস্ক : টেসলার সিইও ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, আগামী মাস থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ বা ‘ডজে’ প্রকল্পে সময় কম ব্যয় করবেন। এর বদলে তিনি বেশি সময় দেবেন টেসলার কাজকর্মে, কারণ কোম্পানিটি ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
সম্প্রতি, টেসলা ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৭১% মুনাফা হ্রাসের সম্মুখীন হয়েছে, যা কোম্পানির জন্য একটি বড় ধাক্কা। এই পতনের পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো ইলন মাস্কের যুক্তরাষ্ট্র সরকারের “Department of Government Efficiency (DOGE)”-এ সম্পৃক্ততা। এই ভূমিকার কারণে টেসলার ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, মাস্ক ঘোষণা করেছেন যে তিনি মে মাস থেকে DOGE-এ তার সময় ব্যয় কমিয়ে টেসলার উপর বেশি মনোযোগ দেবেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে DOGE-এর প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে, তবে তিনি সপ্তাহে এক বা দুই দিন এই প্রকল্পে কাজ চালিয়ে যাবেন।
মঙ্গলবার (টেসলার আয়ের রিপোর্ট প্রকাশের দিন) এক বিনিয়োগকারী সম্মেলনে মাস্ক বলেন, “সম্ভবত মে মাস থেকেই ডজের পেছনে আমার সময় বরাদ্দ অনেকটা কমে যাবে। তবে সরকারি বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের মেয়াদকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু কাজ চালিয়ে যেতে হবে, যাতে দুর্নীতি আর অপচয় আবার ফিরে না আসে,কারণ সুযোগ পেলে ওগুলো ঠিকই ফিরে আসবে।”
এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা জানান, সামনের দিনগুলোতে তিনি সপ্তাহে এক বা দুই দিন সরকারি কাজকর্মে সময় দিতে পারেন, যতদিন তা কার্যকর মনে হয় এবং প্রেসিডেন্ট তা চান। তবে তিনি এটাও বলেন যে, ‘ডজে’ প্রকল্পের প্রধান কাঠামোগত কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
আগামী ৩০ মে ইলন মাস্কের সরকারি বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে বেশ কিছু ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তিনি এই মেয়াদ আর না বাড়ান এবং মাস্ক যেন ওই সময়ের মধ্যেই প্রশাসন থেকে সরে আসেন।
এরই মধ্যে টেসলা এক ভয়াবহ আয়ের পতনের তথ্য প্রকাশ করেছে। সোমবার জানানো হয়, কোম্পানির প্রথম প্রান্তিকের আয় আগের বছরের তুলনায় ৭১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪০৯ মিলিয়ন ডলারে। প্রতি শেয়ারে তা হয়েছে মাত্র ১২ সেন্ট। কোম্পানির রাজস্বও ৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯.৩ বিলিয়ন ডলারে, যা বাজার বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসের তুলনায় অনেক কম।
এই খারাপ ফলাফলের সময়টায় মাস্ক ‘ডজে’ প্রকল্পে ব্যাপক নিয়োগ ছাঁটাই ও সরকারি ব্যয় সংকোচন কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রশাসনকে ঢেলে সাজাচ্ছেন,যা তাকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে মাস্ক বলেন, “আমার বিশ্বাস, এখন সঠিক কাজ হলো দুর্নীতি ও অপচয়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের স্বার্থে কাজ করা। কারণ আমেরিকা যদি ডুবে যায়, তাহলে আমরা সবাই,টেসলা সহ ডুবে যাব।”
এই বক্তব্যের ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে, আটজন ডেমোক্র্যাট অঙ্গরাজ্যের ট্রেজারার (অর্থমন্ত্রী) টেসলার বোর্ড চেয়ারম্যান রবিন ডেনহোলমকে চিঠি দিয়ে কোম্পানির সাম্প্রতিক পতনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তারা চিঠিতে লিখেছেন, “সিইও ইলন মাস্ক এখন একাধিক কোম্পানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা পদেও দায়িত্ব পালন করছেন। এই বহুমুখী সম্পৃক্ততা আমাদের আশঙ্কায় ফেলছে,টেসলার বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেতৃত্ব আসলেই কতটা মনোযোগী?”
চিঠিতে তারা এটাও উল্লেখ করেন যে, টেসলার বর্তমান সমস্যাগুলো গভীরতর নেতৃত্বগত দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়, যার প্রভাব শেষ পর্যন্ত তাদের রাজ্যগুলোর ওপরও পড়তে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।