গ্যাসের প্রিপেইড মিটার চুরি ঠেকানোর প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : দেশে দফায় দফায় বাড়ে গ্যাসের দাম। যা গ্রাহকদের ঘাড়েই পড়ে। কিন্তু এর লস ঠেকানোর উদ্যোগগুলো খুবই ধীরগতিতে চলে। রান্নার গ্যাস ব্যবহারে চুলাপ্রতি টাকা দেয়ার বদলে প্রিপেইড মিটারে খরচ ও গ্যাসের ব্যবহার দুটোই অনেক কম হয়। কিন্তু আপাতত মিটার বসানোর প্রকল্পে রয়েছে ধীরগতি। অর্থায়নের অভাবে মিটার দেয়া হচ্ছে না। জাইকা’র ঋণের অপেক্ষায় রয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ।
উল্টো চুলাপ্রতি খরচ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয় বিভিন্ন সময়ে। অথচ ঢাকার সব এলাকায় ঠিকমতো গ্যাসও পাওয়া যায় না। দুপুরের দিকে নিভু নিভু হয়ে যায় আগুন। কিন্তু মাসের বিল ঠিকই দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিতে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে শিল্পে গ্যাসের দামও বেড়েছে সরকারের নির্বাহী এক আদেশে।
প্রিপেইড মিটার সম্পর্কে ঢাকার মিরপুর রূপনগর এলাকার এক বাসিন্দা জানান, তার বাসায় গ্যাসের প্রিপেইড মিটার বসানো হয়েছে। এতে অনেক সাশ্রয়। মিটার বসানোর পর খরচ কমে দাঁড়িয়েছে সবমিলিয়ে চার থেকে পাঁচশ’ টাকা। কিন্তু বর্তমানে মিটার ছাড়া দুই চুলা ১০৮০ টাকা এবং এক চুলা ৯৯০ টাকা গুনতে হয় গ্রাহকদেরকে। প্রিপেইড মিটার লাগানোর পর গ্যাসের জন্য প্রতি মাসে মোটামুটি এরকমই খরচ হয়। তবে এটা অনেকটাই নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উপর। রিচার্জ করা টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই তিতাস গ্যাসের বুথে গিয়ে আবার টাকা ভরে নেন তিনি। চুলা জ্বলতে থাকলে মিটারে পয়সা বাড়বে এই ধারণাটির কারণেই তিনি গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হয়েছেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)-হিসাবে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে। মিটার বসানো হলে এই চুরি ঠেকানো সহজ হয়।
প্রিপেইড মিটার লাগানোর বর্তমান কার্যক্রম কোন অবস্থায় আছে জানতে চাইলে বিইআরসি’র সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, মিটার বসানোর কাজে খুবই ধীরগতি। কেন ধীরগতি উত্তরে তিনি বলেন, প্রিপেইড মিটার বসালে লস। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ৪০০ টাকা দিয়ে মাস চালানো যায়। সেখানে চুলাতে দিচ্ছেন ১০৮০ টাকা। বর্তমানে দেশে সব মিলিয়ে ৩৮ লাখের মতো গ্রাহক রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ২০২১-২২ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে আবাসিক পর্যায়ে গ্রাহক রয়েছে সাড়ে ২৮ লাখের বেশি। সব মিলিয়ে রয়েছে ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৬০৪ জন। ২০১১ সালে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ শুরু করে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিটি। সে সময় অল্পকিছু মিটার বসানো হয়েছিল। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি’র অর্থায়নে প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালে বিইআরসি সকল গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার বসানোর নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এখন চলমান কোনো প্রকল্প নেই; তাই বন্ধ রয়েছে মিটার বসানো।
ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, তারা মিটার বসানোর ক্ষেত্রে গড়িমসি দেখতে পাচ্ছেন। তাদের দিক থেকে তারা বলে যে, প্রিপেইড মিটারে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ নেই, বসানোর জন্য জনবলের সংকট। এই কারণে তাদের ধীরগতি হচ্ছে। কিন্তু এধরনের ব্যাখ্যা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলো নিজেরাই প্রিপেইড মিটার কিনে লাগিয়ে দেবে পলিসিতে এমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভোক্তা নিজে মার্কেট থেকে কিনতে পারবে না। বিতরণ কোম্পানিগুলো মিটারের ব্যবসায় থাকতে চায় কিন্তু আবার মিটার যেহেতু গ্যাস চুরি ঠেকায় সেজন্য এখন তারা নিরুৎসাহিত। সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দিতে বিইআরসি থেকে পরিপত্র জারি হয়েছে এবং বারবার তাগাদাও দেয়া হয়েছে তারপরও মিটার বসাতে এত দেরি কেন লাগছে এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর জন্য মিটারের চাইতে চুলা প্রতি অর্থ পরিশোধ বেশি লাভজনক। কোম্পানিগুলোর তরফ থেকে প্রিপেইড মিটার কার্যক্রমে ঢিলেমির এটিও একটি কারণ বলে মনে করছেন তিনি।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের কোম্পানির সূত্র জানায়, জাইকা’র দেয়া অর্থে একটি প্রকল্পের আওতায় এপর্যন্ত ৩ লাখ ২০ হাজার মিটার বসানো হয়েছে। সামনে এক লাখ মিটার বসানোর জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পুনরায় প্রকল্প অনুমোদনের জন্য একনেকের সিদ্ধান্ত রয়েছে। সেখানে এক লাখ প্রিপেইড মিটার বসানোর অনুমোদন চাওয়া হবে। সূত্রটি বলছে, ফাইল বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার কারণে এই কাজে খুবই ধীরগতি রয়েছে। প্রায়শই গ্রাহকরা আমাদের কাছে আসছেন কিন্তু আমরা আপাতত আবেদন অফিসিয়ালি আর নিচ্ছি না। কারণ নতুন প্রকল্প কবে চালু হবে সেটা এখনো ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের কোম্পানির প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী সৈয়দ আবু নসর মো. সালেহ বলেন, জাইকা’র ঋণ পেলে প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের কাজ আগাবে। মিটার বসানোর ব্যাপারে কোনো ধরনের গড়িমসির বিষয়টি নাকচ করে দেন তিনি। মানবজমিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।