জুমবাংলা ডেস্ক : সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেছেন, যতদিন খোলাবাজারের সঙ্গে অফিসিয়ালি ডলারের দামে পার্থক্য থাকবে ততদিন হুন্ডিও চলতে থাকবে।
তিনি বলেন, হুন্ডি মোকাবিলায় এ দুই জায়গায় ডলারের দর কাছাকাছি করা উচিত। এটি রোধ করতে হুন্ডি ও কালো টাকার দিকে কঠোরভাবে নজর দিতে হবে। আবার রেমিট্যান্সযোদ্ধাদেরও সামাজিক স্বীকৃতি দিতে হবে, উৎসাহিত করতে হবে।
শনিবার (৮ জুন) সানেমের ‘বাজেট ২০২৪-২৫ পর্যালোচনা’ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, এক বছর ধরে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। বর্তমানে ৯ থেকে ১০ এর মধ্যে ওঠানামা করছে। প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোর সঠিক কোনো কর্মপরিকল্পনা নেই।
তিনি বলেন, দেশের ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। প্রতি বছর খেলাপি ঋণ বেড়েই চলছে। ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে। প্রস্তাবিত বাজেটে খেলাপি ঋণ কমানোর জন্যও কোনো কর্মপরিকল্পনা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া উচিত নয়। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হুন্ডি নিয়ে তিনি বলেন, খোলাবাজারের সঙ্গে অফিসিয়ালি ডলারের দামের পার্থক্য থাকলে হুন্ডি বন্ধ হবে না। দুই জায়গায় ডলারের দর কাছাকাছি করা উচিত। হুন্ডি ও কালো টাকা রোধ করতে কঠোর নজরদারি দরকার।
ড. বিদিশা বলেন, ট্যাক্স পেয়ারদের মতো রেমিট্যান্সে একটা কার্ড হতে পারে। যারা বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তাদের সামাজিকভাবে সম্মানিত করা। তারা যখন বিনিয়োগ করতে চান তাদের ক্ষেত্রে কিছু কিছু সুবিধা আছে এবং সুবিধাগুলো আরও বাড়ানো যেতে পারে। আবার তাদের বিমানে যাওয়ার জন্য আলাদা বিমানের ব্যবস্থা করা, বিমানবন্দরে কিছু সুবিধা দেওয়া। রেমিট্যান্সযোদ্ধারা আমাদের অর্থনীতিকে যেভাবে টিকিয়ে রেখেছেন, শুধু আর্থিক মূল্যে সেটা বিবেচনা করা যায় না। তাদের উৎসাহ দেওয়া, সামাজিকভাবে তাদের সম্মানিত করা। যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তাকে যদি পুরস্কৃত করা হয়, সেক্ষেত্রে মন্ত্রী বা সচিবরা নিজে এসে পুরস্কার তুলে দেন, সেটা কিন্তু তাদের আরও উৎসাহিত করবে। সেই ধরনের উদ্যোগ নিতে বাজেটে খুব বেশি অর্থ বরাদ্দের দরকার পড়ে না।
অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাজেটে দুই বছরের পরিকল্পনা দরকার। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স যে কথাটা আছে, আমরা তো সেই অবস্থান দেখতে চাই। এটার বিরুদ্ধে এত উদ্যোগ, এত কমিটি আছে। দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগ আজই নেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, অতীতে আমরা বিভিন্ন সময়ে শুনেছি, কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয় না। তাহলে সেগুলো কার্যকর হচ্ছে না কেন? এরকম পরিস্থিতির মধ্যেও কেন বড় বড় দুর্নীতির ঘটনা আমরা দেখতে পাই? সেজন্যই আমরা একটা পার্লামেন্টারি কমিটির কথা বলছি, সুপারিশ করছি। যেসব কমিটি এর আগে করা হয়েছে সেগুলোকেও আমরা স্বাগত জানাই। তবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটা পার্লামেন্টারি কমিটির সুপারিশ করছি, যেটা দায়বদ্ধ থাকবে পার্লামেন্টের কাছে।
পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে বাজেটের সম্পর্ক কোথায়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আমরা বাজেটের সঙ্গে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সম্পর্ক দেখি না। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা যেটা পাঁচ বছরের জন্য করা হয়, সেখানে পাঁচটা জাতীয় বাজেট থাকে। তাতে প্রতি বছরের বাজেটই তো হওয়া উচিত একটা স্টেপিং স্টোন। কীভাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষাখাতে ব্যয়, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় যে পরিকল্পনা কমিটমেন্ট করা হয়েছে তার বাস্তবতা কতটুকু থাকে বাজেটে। দুর্ভাগ্যজনক যে সরকার যেটা কমিটমেন্ট করেছে, যেটা পঞ্চবার্ষিকীর পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ পরিকল্পনা, বাজেটে তার যথাযথ প্রভাব নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।