জুমবাংলা ডেস্ক : বিদেশি ঋণের সুদ এবং আসল পরিশোধ বাবদ চলতি অর্থবছরের গত ৯ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৭ শতাংশ বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, ডলারের হিসাবে যা ৪৮ শতাংশ বেশি। ডলারের দাম নতুন করে আরেক দফা বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধে বড় ধরনের চাপ তৈরি হলো। শুধু মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণেই সমপরিমাণ সুদাসল পরিশোধে বেশি টাকা দরকার হবে।
বাড়তি ব্যয় জোগানে ডলার সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। এজন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়ার তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। একই উদ্দেশ্যে প্রকল্প ঋণ বাড়ানোর চেষ্টাও চলছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলার আগামী জুনের মধ্যে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফএর কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ পেতে সংস্থার শর্ত পরিপালনের অংশ হিসেবে গত বুধবার ডলারের দর নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে প্রতি ডলারে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা মধ্যবর্তী দর ঘোষণা করা হয়। নতুন পদ্ধতি চালুর আগে সর্বশেষ ঘোষিত দর ছিল ১১০ টাকা। কিন্তু প্রকৃত দর ছিল এর চেয়ে বেশি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ১১৭ টাকা ঘোষণা করে ব্যাংকগুলো ১ টাকা কম-বেশি করতে পারবে বলে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামীতে ডলারের দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ, ক্রলিং পেগ পর্যায় শেষে ডলারের দর পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার আগের এ পদ্ধতিতে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের দর পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে ডলারের দাম আরও কিছুটা বেড়ে যাওয়ার কথা।
বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে সরকারের ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ইআরডির সর্বশেষ উপাত্ত অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গেল মার্চ পর্যন্ত বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করা হয়েছে ২৫৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। এ সময় উন্নয়ন সহযোগীদের ছাড় করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬৩ কোটি ডলার, সে হিসেবে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে পরিশোধের পরিমাণ ঋণ ছাড়ের ৪৬ শতাংশ ।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে একই সময়ে বিদেশি ঋণ ছাড় হয় ৫৩৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ওই সময়ে সুদাসলে পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১৭৩ কোটি, যা ছাড় করা অর্থের ৩২ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত ৯ মাসে শুধু সুদ পরিশোধের পরিমাণ ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার, গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। গত ৯ মাসে আসল পরিশোধ হয় ১৫২ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল প্রায় ১২৪ কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রকল্প সহায়তা বাবদ বিদেশি ঋণ রিজার্ভে তেমন প্রভাব ফেলে না। প্রকল্পের কেনাকাটায় তা ব্যয় হয়। এ ছাড়া এ প্রক্রিয়ায় লম্বা সময় প্রয়োজন। সরকারের এখন নগদ ডলার দরকার। সে হিসেবে বাজেট সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।
ইআরডির তথ্য বলছে, গত ৯ মাসে বিদেশি ঋণের সুদাসল বাবদ ২৮ হাজার ২৮১ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে; গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৬ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। টাকার হিসাবে ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে ২৫ শতাংশ। নতুন করে টাকার মান কমায় শুধু এ কারণেই পরিশোধের চাপ বাড়বে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।