জুমবাংলা ডেস্ক : বর্তমান ডলার সংকটের অন্যতম কারণ সোনা চোরাচালান। আমরা সোনা চোরাচালান বন্ধ করতে পারি তাহলে ডলার সংকট কেটে যাবে। মানিলন্ডারিংও অনেকটা কমে যাবে বলে জানিয়েছেন সোনা ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সঙ্গে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান সোনা ব্যবসায়ীরা।
সোনা চোরাচালান প্রতিরোধে যৌথ কার্যক্রম গ্রহণে চলমান বিষয়ে এই সভা হয়। বিএফআইইউ’র প্রধান কর্মকর্তা মো. মাসুদ বিশ্বাস সভায় সভাপতিত্ব করেন। বাজুসের প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সভায় অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকে ব্যবসায়ীরা জানান, অর্থ পাচার ও ডলার সংকটের নেপথ্যে রয়েছে সোনা চোরাচালান। অপরাধ করেও অনেকে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন ও খালাস পাচ্ছেন। তাই সোনা চোরাচালান বন্ধে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে জামিন অযোগ্য মামলা দেওয়ার পক্ষে মত দেন তারা।
বৈঠকে বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে বিএফআইইউ’র ভূমিকা তুলে ধরেন।
বৈঠক শেষে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এন্টি স্মাগলিং অ্যান্ড ল’এনফোর্সমেন্টের চেয়ারম্যান এনামুল হক খান দোলন সাংবাদিকদের জানান, বিএফআইইউ ও বাজুস একসঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায়, এজন্য এই বৈঠক হয়েছে। এসময় সোনা চোরাচালান বন্ধ ও ব্যবসার বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়েছে। আগামী দিনে একসঙ্গে করবো বলে একমত হয়েছি। আমরা আমাদের সদস্যদের সোনা চোরাচালান বন্ধে সচেতন বাড়াতে কাজ করবো।
বাজুস সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, বাজুসের তালিকায় ৪০ হাজার ব্যবসায়ী রয়েছে। আমরা বিএফআইইউকে এসব ডাটাবেজের তথ্য দেব। তারা তথ্য পর্যবেক্ষণ করবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগারওয়ালা বলেন, এখন পর্যন্ত কোনও বাজুসের কোনও সদস্য সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ হয়নি। আগামীতে যদি কোনও সদস্যের চোরাচালান করছে এমন তথ্য পাওয়া যায় তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
তিনি জানান, অবৈধভাবে আসা বা চোরাচালানের সময় জব্দ করা সোনা নিলামে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ দাবি আমাদের অনেক আগে থেকেই ছিল। আমরা চাই ডলার সংকটের এ সময়ের জব্দকৃত বার নিলামে বিক্রি করা হোক। এসব ‘র’ মেটারিয়াল আমাদের দেশের জন্য ভালো হবে, কারণ আমাদের এখানে বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারির মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আমরা চাই অবৈধভাবে সোনার বার আনা বন্ধ হোক তাহলে চোরাচালানের মাধ্যমে যে মানিলন্ডারিং হচ্ছে তা অনেক কমে যাবে।
সভায় লিখিতভাবে বাজুসের পক্ষ থেকে বলা হয়, জুয়েলারি শিল্পে সোনা চোরাচালান বড় ধরনের সংকট ও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোরাচালান শুধু দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে না। চোরাচালানের ফলে অর্থনৈতিক সংকট বাড়ছে। আমরা ধারণা করছি, প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপব্যবহার করে সারাদেশের জল, স্থল ও আকাশ পথে প্রতিদিন কমপক্ষে প্রায় ২০০ কোটি টাকার অবৈধ সোনার অলঙ্কার ও বার চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে। যা ৩৬৫ দিন বা একবছর শেষে দাঁড়ায় প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। তাই সোনা চোরাচালান প্রতিরোধে যৌথ মনিটরিং সেল গঠনসহ ৭ প্রস্তাব দিয়েছে সোনা ব্যবসায়ীরা।
বাজুসের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে—
স্বর্ণ চোরাচালান, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ এবং চোরাকারবারিদের চিহ্নিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাজুসের সমন্বয়ে যৌথ মনিটরিং সেল গঠন করা। চোরাকারবারিরা যাতে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেড়িয়ে যেতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করা। স্বর্ণ চোরাচালান প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের জোরালো অভিযান নিশ্চিত করা। চোরাচালান প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে উদ্ধার হওয়া স্বর্ণে মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ সংস্থাগুলোর সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণের বার ও অলঙ্কার আনার সুবিধা অপব্যবহারের কারণে ডলার সংকট, চোরাচালান এবং মানিলন্ডারিংয়ে কী প্রভাব পড়ছে, তা নিরূপণে বাজুসকে যুক্ত করে যৌথ সমীক্ষা পরিচালনা করা। অবৈধ উপায়ে কোনও চোরাকারবারি যেন স্বর্ণের বার বা অলঙ্কার দেশে আনতে এবং বিদেশে পাচার করতে না পারে সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান। জল, স্থল ও আকাশ পথ ব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে কেউ যেন স্বর্ণের বার বা অলঙ্কার আনতে না পারে এজন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এন্টি স্মাগলিং অ্যান্ড ল’ এনফোর্সমেন্টের চেয়ারম্যান এনামুল হক খান দোলন ও সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগারওয়ালা ছাড়াও বিএফআইইউয়ের উপ-প্রধান ও পরিচালকসহ ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।