জুমবাংলা ডেস্ক : টাঙ্গাইলের মধুপুরের কালিয়াকুড়িতে গরিবের জন্য হাসপাতাল গড়ে তুলেছিলেন নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী ডাক্তার এড্রিক বেকার। এলাকার মানুষের কাছে যিনি “ডাক্তার ভাই” নামেই পরিচিত ছিলেন।
বেকার মারা যাওয়ার পর বাংলাদেশের কোনো চিকিৎসক এগিয়ে না এলেও শেষপর্যন্ত হাসপাতালটির দায়িত্ব নিয়েছেন আমেরিকান ডাঃ দম্পত্তি জেসিন-মারিন্ডি।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিটিভিতে প্রচারিত বাংলাদেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন হানিফ সংকেতের ইত্যাদি অনুষ্ঠানে এই দম্পত্তিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিটিভিতে ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে মানবতাবাদী ডাক্তার জেসিনকে ইত্যাদির এই পর্বে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ডাক্তার বেকারের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় কিছুটা সহায়তা করার জন্য ইত্যাদি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কেয়া কসমেটিকস এর সৌজন্যে দুই লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। ইত্যাদির নন্দিত উপস্থাপক হানিফ সংকেত দুই লাখ টাকার চেক নতুন ডাক্তার ভাই জেসিনের হাতে তুলে দেন।
এসময় চেক হাতে নিয়ে হানিফ সংকেত ও ইত্যাদির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘এই টাকা আমরা গরীব মানুষের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করব।’
পৃথিবীতে এত দেশ বা জায়গা থাকতে মধুপুরের কালিয়াকুড়িতে কেন আসলেন? ‘অনুষ্ঠানে হানিফ সংকেতের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডাঃ জেসিন জানান, গরীব মানুষের সেবা করতে বাংলাদেশে এসেছি।’
ডাক্তার বেকারের মতো নিজেরাও মানুষের সেবা করতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের অনেক ভালো লাগে। এখানকার মানুষগুলোও খুব ভালো। ওর গরীব, তাই ওদের সেবা করতে পেরে আমরা আনন্দ পাই।’
“চিকিৎসার মূল কথা মানুষের সেবা, ঠিকমতো সেই সেবা দিতে পারলে ডাক্তার ভাইয়ের আত্মা শান্তি পাবে।” এসময় দেশের সকল মানুষের সহযোগিতা চান মার্কিন এই চিকিৎসক।
এর আগে মধুপুরে নিজ বাড়িতে সাক্ষাৎকারে ডাঃ জেসিনের স্ত্রী মারিন্ডি বলেন, ‘ছোট ছেলে-মেয়েরা ঝাল খাবার খুব একটা পছন্দ করে না, তবে আমাদের ভাত-মাছ-ডাল বেশি ভালো লাগে।’
“গ্রামে ছেলে-মেয়েদের অনেক ছোট বন্ধু আছে, তারা এখানে এসে ওদের সঙ্গে খেলা করে। আমাদের একটি চমৎকার বাড়ি আছে, যেখানে আমরা বসবাস করছি।” বলেন ডাঃ মারিন্ডি।
উল্লেখ্য, ডা. এড্রিক বেকার টানা ৩২ বছর টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের কালিয়াকুড়ি গ্রামের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা দিয়েছেন। তাদের জন্য গড়ে তুলেছিলেন হাসপাতাল। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে নিজের তৈরি হাসপাতালেই ২০১৫ সালে মারা যান এড্রিক বেকার এবং হাসপাতালের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।
মৃত্যুর আগে তিনি চেয়েছিলেন এ দেশের কোনো ডাক্তার যেন গ্রামে এসে তার প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালের হাল ধরেন। কিন্তু হানিফ সংকেতের ইত্যাদিতে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুসারে- এ দেশের একজন ডাক্তারও তার সেই আহ্বানে সাড়া দেননি।
অবাক করা ব্যাপার হলো, দেশের কেউ সাড়া না দিলেও তার আহ্বানে সুদূর আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছেন আরেক মানবতাবাদী ডাক্তার দম্পতি জেসিন এবং মেরিন্ডি।
হানিফ সংকেতকে ডা. জেসিন জানান, ডা. এড্রিক বেকার বেঁচে থাকার সময় কালিয়াকুড়ির এই হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছিলেন। পরে ডাক্তার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে জেসন অস্থির হয়ে ওঠেন। কিন্তু তখন নিজের প্রশিক্ষণ ও ছেলেমেয়েরা ছোট থাকার কারণে জেসন বাংলাদেশে আসতে পারেননি।
অবশেষে সবকিছু গুছিয়ে সম্পদ আর সুখের মোহ ত্যাগ করে ২০১৮ সালে পুরো পরিবার নিয়ে আমেরিকা ছেড়ে স্থায়ীভাবে চলে আসেন মধুপুরে। জেসন হয়ে ওঠেন নতুন ডাক্তার ভাই আর মেরিন্ডি হয়ে ওঠেন সবার প্রিয় ডাক্তার বিবি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।