জুমবাংলা ডেস্ক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় ঔষধ নীতির রূপকার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মারা গেছেন। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রধান চিকিৎসক ও গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রধান কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মামুন মোস্তাফী রাত ১১টা ৪০ মিনিটে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ সাংবাদিকদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ভাই আর আমাদের মাঝে নেই। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ, আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন।
মামুন মোস্তাফী বলেন, আমার জীবনে সবচেয়ে বড় সম্মানের বিষয় হলো আমি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি। তার মতো দ্বিতীয় একটা মানুষ এখনো দেখিনি। তিনি একজন সৎ, নির্ভেজাল মানুষ। পৃথিবীতে সব সময় এমন মানুষ আসে না। শুধু চিকিৎসা সেবায় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদান নয়, সমাজ ও রাজনীতিতেও তিনি অনেক অবদান রেখেছেন। আমার দৃষ্টিতে তিনি একজন অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ও দূরদর্শী মানুষ ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর যেসব চিন্তা-চেতনা সেগুলো দেশের জন্য খুবই দরকারি। এ রকম একটা মানুষ সমাজে থাকাটাই সমাজের জন্য একটা সম্পদ। তিনি যা ভালো মনে করতেন তাই করতেন, এমন সাহসী মানুষ দ্বিতীয়টা হয়তো আর আসবে না। তিনি শুধু নিজেই সমাজের জন্য সব কিছু করেননি, আরও বহু মানুষকে অবদান রাখারও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যারা সমাজের ভালো চান, তারা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে সহযোগিতা করেছেন বলেই এই কাজগুলো করতে পেরেছেন। তিনি আমাদের মাঝে নেই। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো তার কাজগুলোকে যথাযথভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যাতে করে তার হাতে গড়া জিনিসগুলো হারিয়ে না যায়। পাশাপাশি উনার অসমাপ্ত কাজগুলো আমরা সবাই মিলে যেন সম্পন্ন করতে পারি সেটাই চাওয়া।
দীর্ঘদিন কিডনিরোগসহ বিবিধ স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন সহধর্মিণী নারীনেত্রী শিরীন হক এবং দুই সন্তান।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজানে জন্মগ্রহণ করেন। বিপ্লবী মাস্টার দা সূর্যসেন ছিলেন তার বাবার শিক্ষক। পিতামাতার ১০ সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণের পর তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস-এ এফআরসিএস পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না করেই লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য আগরতলার মেলাঘর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন। পরে ডা. এম এ মবিনের সঙ্গে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। সে সময় তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন যা দিয়ে তারা রোগীদের সেবা করতেন। তার এই অভূতপূর্ব সেবাপদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার ‘ল্যানসেট’ এ প্রকাশিত হয়।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়াও তিনি ফিলিপাইন থেকে রামন ম্যাগসাইসাই (১৯৮৫), সুইডেন থেকে বিকল্প নোবেল হিসাবে পরিচিত রাইট লাভলিহুড (১৯৯২), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো’ (২০০২) এবং মানবতার সেবার জন্য কানাডা থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। ২০২১ সালে আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কার পান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।