লাইফস্টাইল ডেস্ক : সানি-সাইড আপ, পোচ অনেকেরই খুব প্রিয়। ডাবল ডিমের অমলেট শুনলেও জিভে জল আসে অসংখ্য মানুষের। হাফ বয়েলড বা ফুল বয়েলড অথবা স্ক্র্যাম্বলড এগ ভালোবাসেন না, এমন মানুষ কমই।
অথচ আক্ষেপ, কোলেস্টেরল আর হৃদ-স্বাস্থ্যের কথা ভেবে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে থাকতে হয় ডিম থেকে। তাঁদের আশ্বস্ত করছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা। তাতে দাবি, ডিমে ভয় আদতে সেকেলে বাজে ধারণা।
আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞানকে সমর্থন করে ইউএসএ-র ওই গবেষণা দ্বর্থ্যহীন ভাষায় জানাচ্ছে, ডিমের কুসুম খেলে আদৌ বাড়ে না কোলেস্টেরল। টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে ‘প্রসপারিটি ট্রায়াল’-এর অধীনে শতাধিক লোকজনকে গোটা ফর্টিফায়েড ডিম খাইয়ে গবেষকরা দেখেছেন, যাঁরা ডিম খাননি, তাঁদের সঙ্গে ডিম খাওয়া ব্যক্তিদের কোলেস্টেরলের উন্নতি বা অবনতির কোনও ফারাক প্রায় নেই।
নর্থ ক্যারোলিনার ডিউক ক্লিনিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষকদের করা এই স্টাডির কথা কিছু দিন আগে উপস্থাপিত হয়েছে আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিয়োলজির বার্ষিক বিজ্ঞান সম্মেলনের মঞ্চে। হাই কোলেস্টেরল এবং হার্ট-হেলথের ঝুঁকি রয়েছে, পঞ্চাশোর্ধ্ব এমন ১৪০ জনের (পুরুষ ও মহিলার অনুপাত ৫০:৫০) উপর চার মাস ধরে স্টাডিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্য গবেষক নিনা নাওরাবেশ। ওই ১৪০ জনকে দু’টি গোষ্ঠীতে ভাগ করে নেওয়া হয়েছিল। ৮০ জনকে সপ্তাহে ১২টি বা তার বেশি ডিম খাওয়ানো হয়েছিল আর ৬০ জনকে সপ্তাহে দু’টি বা তার কম ডিম দেওয়া হয়েছিল।
ডিম মানে, ফর্টিফায়েড এগ, যাতে সাধারণ ডিমের সঙ্গে বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেলস ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যোগ করা হয় হ্যাচারিতে।
কী দেখা গিয়েছে সেই স্টাডিতে?
দেখা গিয়েছে, এগ ডায়েট এবং নন-এগ ডায়েট যাঁরা খেয়েছেন, ছ’ মাসের মাথায় তাঁদের কারও এলডিএল, এইচডিএল কিংবা ট্রাইগ্লিসারাইডের লেভেলে তাৎপর্যপূর্ণ তেমন কোনও ফারাক পড়েনি আদৌ।
নিনার কথায়, ‘দীর্ঘ দিন ধরে কোলেস্টেরল এবং হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য গোটা ডিমকে ভিলেন ঠাওরানো হয়। ডিমের সাদা অংশ বা অ্যালবুমিন নিয়ে কোনও সমস্যা না থাকলেও বরাবর মনে করা হয়, কুসুমেই রয়েছে সমস্যা। কুসুমের মধ্যে যেহেতু অনেক কোলেস্টেরল থাকে, তাই বেশি কুসুম খেলে রক্তেও কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু আমাদের স্টাডিতে স্পষ্ট, এ সব ভ্রান্ত ধারণা।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিমের মতো এত ভালো খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার যে নিরাপদ তকমা পাচ্ছে, তা আখেরে জনস্বাস্থ্যের জন্যই ভালো।
ডায়েটিশিয়ান শম্পা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সিদ্ধ ডিমে কোলেস্টেরলের ঝামেলা কোনও দিনই ছিল না। উল্টে, কুসুমের মধ্যে থাকা কোলিন নামের রাসায়নিক মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। তাই আমরা কোনও দিনই সপ্তাহে গোটা পাঁচেক ডিম খেতে বারণ করি না। উল্টে বলি, ডিমের মতো এত সুসংহত ও সম্পূর্ণ প্রোটিন আর নেই।’ তিনি জানান, ডিমের কুসুম ডায়াবিটিস রোগীদের ইনসু্লিন রেজ়িস্ট্যান্স কমায়, ফ্যাটি লিভারের রোগীদের লিভারেও ডিমের সুফল প্রমাণিত।
এন্ডোক্রিনোলজি বিশেষজ্ঞ সুজয় ঘোষ বলেন, ‘কুসুমের মধ্যে থাকা কোলেস্টেরল আর রক্তের কোলেস্টেরল এক জিনিস নয়। সুতরাং, কুসুম খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বাড়বে, এটা ধরে নেওয়া ভুল।’ একই সুর আর এক পুষ্টিবিদ অরিজিৎ দে-র গলায়। তাঁর বক্তব্য, ‘সাম্প্রতিক নানা গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আর কাউকে ডিম খেতে নিষেধ করি না। বরং ডিম খেতে বলি। আর ডিম ভাজা বা অমলেট খেলে নামমাত্র ভালো তেল ব্যবহার করা উচিত। কারণ, ডিমে নয়, কোলেস্টেরলের নিরিখে আসল ক্ষতিটা মূলত ওই তেলেই লুকিয়ে থাকে’।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।