জুমবাংলা ডেস্ক : সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির মধ্যেও ৫০টি জিপ গাড়ি কেনা হচ্ছে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য। প্রতিটি গাড়ির মূল্য প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দুইশ গাড়ি কেনার প্রস্তাব থাকলেও অর্থ সংকটের কারণে তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। দেশের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা যুগান্তর- এ আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত সাংবাদিক মিজান চৌধুরী-এর এক প্রতিবেদনে এমনি তথ্য উঠে এসেছে।
কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচির আওতায় গাড়ি কেনা বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ডিসি ও ইউএনওদের জন্য ২০০ গাড়ি কেনার অর্থ চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে। অর্থ সচিব এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন। বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা দেশের বাইরে থাকায় ফাইলটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। তিনি দেশে ফিরলেই এ ফাইলে স্বাক্ষর হতে পারে। এর আগে গত অর্থবছর মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনের জন্য ডিসি ও ইউএনওদের ২৬১টি জিপ কেনা হয়। সে সময় ‘থোক’ বরাদ্দ থেকে প্রায় পৌনে চারশ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও সমপদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য সম্প্রতি জিপ গাড়ি কেনা হয় ৫০টি। প্রাধিকার ভিত্তিতে উপদেষ্টাদের গাড়ি কেনা হলেও শর্ত শিথিলের সুযোগ নিয়ে ডিসি ও ইউএনওদের গাড়ি কেনা হচ্ছে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যয় নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। নতুন করে এই গাড়ি কেনায় এক ধরনের চাপের মুখে রয়েছে সরকার।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই অর্থ বিভাগের এক নির্দেশনায় সরকারি চাকরিজীবী গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য অনূর্ধ্ব ২৭০০ সিসির জিপ গাড়ি কেনার বিধান চালু করে। যার মূল্য (রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ) ১ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। পরবর্তী ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর দাম বাড়িয়ে জিপ গাড়ির মূল্য ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩ হাজার টাকা (রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ) নির্ধারণ করা হয়।
এখন প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা ব্যক্তিদের গাড়ি দেওয়া হচ্ছে ডিসি ও ইউএনওদের। যদিও তারা প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেড কর্মকর্তা নন। সে বিষয়ে যৌক্তিকতা তুলে ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাদের প্রস্তাবে বলেছে, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা জেলা ও উপজেলায় দপ্তরপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এক্ষেত্রে তাদের মাঠপর্যায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, পরিদর্শন, তদারকি, আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন কাজসহ নানাবিধ দায়িত্ব পালন করতে হয়। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা গ্রেড-১ বা গ্রেড-২ পর্যায়ের কর্মকর্তা না হলেও দাপ্তরিক কাজের প্রয়োজন ও প্রকৃতি বিবেচনায় ২৭০০ সিসি গাড়ি প্রতিস্থাপক হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, জনপ্রশাসনের কাজের গতি ধরে রাখতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য ২০০ গাড়ি প্রয়োজন। প্রতিস্থাপক হিসাবে এসব গাড়ি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লি. থেকে কেনা হবে। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত বিধি মোতাবেক ডিপিএম পদ্ধতিতে প্রতিটি জিপ গাড়ির মূল্য ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে ২০০ জিপ গাড়ি মূল্য ৩৩৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এই অর্থ চলতি অর্থবছরে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরাধীন সরকারি সড়ক পরিবহণ শাখা বাজেট থেকে ব্যয় করার সম্মতি চাওয়া হয়েছে। অবশ্য মোটরযান ক্রয় খাতে ৩৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরাধীন সরকারি সড়ক পরিবহণ শাখার বাজেটে।
সূত্রমতে, অর্থ বিভাগ গাড়ি কেনার প্রস্তাবটি বিশ্লেষণ করেছে। বিদ্যমান অর্থ সংকটের মধ্যে সবগুলো গাড়ি কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। সে প্রেক্ষাপটে প্রতিস্থাপক হিসাবে ২০০টি গাড়ির পরিবর্তে ৫০টি গাড়ি কেনার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। যার বাজার মূল্য ৮৪ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, কৃচ্ছ সাধন নীতির আওতায় নতুন গাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে অর্থ বিভাগের। এজন্য এ খাতের পুরো বরাদ্দ স্থগিত আছে। তবে অর্থ বিভাগের নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের ভাষায় একটি সূক্ষ্ম কৌশল আছে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা আছে, নতুন গাড়ি কেনা বন্ধ থাকলেও ১৪ বছরের অধিক পুরোনো গাড়ি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়লে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব দেওয়া যাবে। এ ধরনের প্রক্রিয়ায় গাড়ি কেনাকে বলা হয়েছে প্রতিস্থাপন। এই পুরোনো গাড়ির প্রতিস্থাপক হিসাবে গাড়ি কেনার প্রস্তাব বিভিন্নভাবে অর্থ বিভাগে আসছে।
সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলমান অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনায় প্রথমে ১৩ বছর বা তারও পুরোনো এবং ব্যবহার অনুপযোগী ৪৬১টি গাড়ির চাহিদা রয়েছে। সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১১৬টি উপজেলার জন্য ২০১৮ সালে ৫০টি এবং ২০১৯ সালে ৬৬টি গাড়ি কেনা হয়। ২০২৪ সালে কেনা হয় ২৬১টি।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি বেরোবি ছাত্রলীগ নেতা আকাশ গ্রেফতার
অর্থ বিভাগের শর্তারোপ : গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আনুষ্ঠানিকভাবে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। সেখানে বলা হয়, প্রতিস্থাপক হিসাবে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বর্তমান গাড়ির বয়স ১৪ বছর হয়েছে এবং অকেজো এ ঘোষণাসংক্রান্ত বিআরটিএর পরিদর্শক দলের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। পরে সে অনুলিপি অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। এছাড়া গাড়ি কনডেম কমিটির মিটিং করে তার অনুলিপিও পাঠাতে হবে। আর কনডেম করার পর গাড়িগুলো বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। এরপর জমার রসিদ অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।
সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।