জুমবাংলা ডেস্ক: ২০২০ সালের প্রায় পুরোটাই করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভাটা গেছে। তবে এই মহামারির মধ্যেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রেখেছিলেন। ফলে প্রতি মাসেই বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ।
গত ডিসেম্বরেও ২০৫ কোটি ০৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশে ১ হাজার ২৯৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এলো। বাংলাদেশ মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ১০ হাজার ৩০ কোটি টাকা। রেমিট্যান্সের প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত ডিসেম্বর মাসে প্রবাসীরা ২০৫ কোটি ০৬ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৭ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা ২১ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। গত বছরের ডিসেম্বর ১৬৯ কোটি ১৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর নভেম্বর মাসে প্রবাসীরা ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলারের পাঠিয়েছেন। এদিকে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে এসেছে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সে হিসেবে গত এক বছরে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২৯৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময় রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৪০ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। বৈধ উপায়ে প্রবাসী আয় বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে অনুযায়ী, গতবছরের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠালে প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পেয়ে আসছেন। এর ফলে করোনার মধ্যেও রেকর্ড গড়ছে রেমিট্যান্স।
করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে মন্দা কাটাতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ৫ হাজার ডলার বা প্রায় ৫ লাখ টাকা কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া ২ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। যা আগে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছিল।
এদিকে গত নভেম্বরে রেমিট্যান্স পাওয়া আরো সহজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রেমিট্যান্স প্রদানকারী ব্যাংক রেমিটারের কাগজপত্র নিজ দায়িত্বেই যাচাই করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রণোদনার অর্থ ছাড় করার জন্য রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংকের কাছে ‘কনফার্মেশন’ পাঠাবে। তার ভিত্তিতে রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংক রেমিটেন্স প্রদানকারী ব্যাংক বরাবর প্রণোদনার টাকা ছাড় করবে বলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রেমিট্যান্স বাড়ার কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিকে অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়াকে নির্দেশ করে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মজুদ থাকলে তাকে ঝুঁকিমুক্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়। বাংলাদেশের কাছে এখন যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আছে তা দিয়ে ১০ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। গত ডিসেম্বরে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
মহামারির সময়ে যে রেমিট্যান্স এসেছে তার এক তৃতীয়াংশই এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। রেমিট্যান্স বাড়া বিষয়ে এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে হুন্ডি একেবারেই কমে গিয়েছে। ফলে বৈধ চ্যানেলে টাকা এসেছে। রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনাও অন্যতম একটি কারণ বলে জানান তিনি।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনার কারণে আমদানি-রপ্তানির মতো রেমিট্যান্সেও পতন হবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। তবে সেটা ঘটেনি। যা অর্থনীরি জন্য ভালো ফল বয়ে এনেছে। সূত্র: ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।