প্রাথমিকভাবে কোনো অ্যান্টিজেনকে প্রতিহত করা সম্ভব হলে পরে দেখা যায় শরীরে সেই অ্যান্টিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করতে সক্ষম বেশ কিছু লিম্ফোসাইটের রয়ে গেছে। সেগুলো একই অ্যান্টিজেন দিয়ে পরবর্তী সময়ে শরীর আবারও আক্রান্ত হলে বেশ দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে পারে। সেগুলোকে বলে মেমোরি সেল। প্রথমবারে লিম্ফোসাইটগুলো উদ্দীপ্ত হতে ও সংখ্যাবৃদ্ধি করতে যতটা সময় নেয়, দ্বিতীয়বার সয়ম নেয় অর্ধেকেরও কম।
এই সময়ের মধ্যে তীব্র আক্রমণ পরিচালনা করতে পারে এই পূর্বপ্রস্তুতির কারণে। এ জন্য প্রথমবার ডেঙ্গু সংক্রমণের ক্ষেত্রে তার যেকোনো সেরোটাইপের জন্য নির্ধারিত আইজিজি ও আইজিএম অ্যান্টিবডিগুলো পরীক্ষায় ধরা পড়তে অন্তত পাঁচ-ছয় দিন সময় লাগে। তবে দ্বিতীয়বার সংক্রমণের বেলায় তা একেবারে প্রথম বা দ্বিতীয় দিন থেকেই পজিটিভ আসতে পারে, বিশেষ করে আইজিজি।
দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত কেউ যদি প্রথমবারের মতো একই সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হয়, তাহলে তো খুবই ভালো। কারণ, দ্বিতীয়বারে তার খুব একটা ভুগতে হবে না। আগে থেকে জমে থাকা মেমোরি সেলগুলো প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি করে খুব সহজে ডেঙ্গুকে কাবু করে ফেলবে।
যেমন কেউ প্রথমবার DENV2 দিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল এবং পরের বারও DENV2 দিয়ে আক্রান্ত হলো। প্রথমবার তাকে হয়তো হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল কিন্তু দ্বিতীয়বার সে হয়তো অসুখটা বুঝতেও পারবে না। কিন্তু প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয়বারের সেরোটাইপ আলাদা হলে এবং দুটি সংক্রমণের মধ্যে তফাত হয় তিন মাসের বেশি হলে বিপদ আছে! সে ক্ষেত্রেও মেমোরি সেলগুলো প্রচুর অ্যান্টিবডি তৈরি করে ঠিকই, তবে তা ডেঙ্গু ভাইরাসের সঙ্গে পর্যাপ্ত বন্ধন তৈরি করতে পারে না।
কোনো অ্যান্টিবডি তার নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের যে অংশে দৃঢ়ভাবে আটকে যেতে পারে, সেই অংশটিকে বলে এপিটোপ। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ডেঙ্গু ভাইরাসের ই প্রোটিনের অন্তত ৩০টি এপিটোপে যদি অ্যান্টিবডি আটকে যেতে পারে, তখনই কেবল ভাইরাসটি নতুন করে আর কোনো কোষে সংক্রমণ ঘটাতে পারে না। কিন্তু একটি সেরোটাইপের জন্য নির্ধারিত অ্যান্টিবডি অন্য একটি সেরোটাইপের ই প্রোটিনের এতগুলো এপিটোপ দখল করতে পারে না।
এতে হিতে বিপরীত হয়; কারণ অ্যান্টিবডির যে দিকটি এপিটোপে লেগে থাকে, তার বিপরীত দিকটি এ ক্ষেত্রে মনোসাইট, ম্যাক্রোফেজ ও ডেনড্রাইটিক কোষে ঢোকার চাবি হিসেবে কাজ করে। এগুলো ডেঙ্গু ভাইরাসের টার্গেট কোষ! কোনো অ্যান্টিবডি ডেঙ্গু ভাইরাসের সঙ্গে গিয়ে না লাগলে এমনিতে যতগুলো ভাইরাস কোষে ঢুকতে পারত, ভিন্ন সেরোটাইপের অ্যান্টিবডির এমন অপর্যাপ্ত বন্ধনের দরুণ তার চেয়ে অনেক বেশি ভাইরাস এখন কোষে ঢুকে পড়ে।
একে বলে অ্যান্টিবডি ডিপেন্ডেন্ট এনহান্সমেন্ট বা সংক্ষেপে এডিই। এটা ডেঙ্গু ছাড়াও জিকা, ইয়েলো ফিভার, এইচআইভি ইত্যাদি ভাইরাসের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। তা ছাড়া পরিবর্তিত সেরোটাইপের জন্য নতুন করে সুনির্দিষ্ট ও সঠিক প্রকারের লিম্ফোসাইট আর উদ্দীপ্ত হয় না। কারণ, বেশি মেমোরি সেল থাকায় সুরক্ষাব্যবস্থা ‘অপচয়’ রোধ করার জন্য তা হতে দেয় না। অর্থাৎ দেহ বোকা বনে যায়।
সেভাবে যে সুরক্ষাব্যবস্থা খুব ভালো সুরক্ষা দিচ্ছে অথচ বাস্তবে ঘটনা ঠিক উল্টো। কোষের ভেতরে ও বাইরে ডেঙ্গু ভাইরাস গিজগিজ করছে। সেগুলোকে প্রতিহত করার জন্য সুরক্ষাব্যবস্থার কোষগুলো থেকে সাইটোকাইন নামক একজাতীয় রাসায়নিক নিঃসৃত হচ্ছে ক্রমাগত। তাতে ভাইরাসের খুব একটা কিছু হচ্ছে না। তবে সেগুলোর প্রভাবে রোগী তার রক্তনালি থেকে পানি হারাচ্ছে, প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে, রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং কখনো কখনো প্রাণও হারাচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।