জুমবাংলা ডেস্ক: জনপ্রিয় অনেক সিনেমা, সিরিজ, বই কিংবা ভিডিও গেমে ড্রাগনের দর্শন অহরহ। এসবে দেখা যায়, বিশাল ডানা মেলে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে দানবাকৃতির সেই সরীসৃপ। নিঃশ্বাসে সে আগুন ছড়ায়, ডানায় উরে মানুষ খায়, জনমনে ভয় ছড়ায়। উপকথার কাল্পনিক অগ্নিশ্বাসী দানবীয় এই সরীসৃপ মোটামুটি সবার কাছেই পরিচিত। প্রাচীন সভ্যতার উপকথাগুলোতে কোনো না কোনো ড্রাগনের উপস্থিতি সেই কাহিনীকে আরো মুগ্ধকর করে।
এদের মধ্যে কিছু বিষয়ে মিল থাকলেও সব দানবীয় সরীসৃপ কিন্তু ড্রাগন নয়! আচরণ, বসবাসের অঞ্চল, শারীরিক গঠন, আর গল্পে উপযোগিতা হিসেবে ড্রাগনেও রয়েছে নানা প্রকারভেদ।
আজ বরং জানা যাক, আমাদের উপকথায় বর্ণনা করা ড্রাগনদের শারীরিক গঠনের ভিত্তিতে করা শ্রেণিবিন্যাস।
১) ক্লাসিক ইউরোপিয়ান ড্রাগন (Draco Occidentalis Magnus)
ড্রাগন বললে প্রথমেই ক্লাসিক ইউরোপিয়ান ড্রাগনের অবয়ব কল্পনায় আসে। এই ড্রাগনেরা যেমন বিশালদেহী, তেমনি শক্তিশালী। সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং শক্তিশালী স্থলজ জীব। অন্তত ১৫ মিটার দীর্ঘ এবং পাঁচ মিটার উচ্চতার এই সরীসৃপ চার পায়ে ভর দিয়ে সিংহের মতো দাঁড়াতে পারে। আবার অতিকায় চামড়ার তৈরি ডানা মেলে উড়তেও পারে। এদের নিঃশ্বাসে আছে আগুনের হল্কা।
এছাড়াও এদের অনেকের হিপনোটিজম, টেলিপ্যাথির মতো জাদুকরী ক্ষমতা থাকে বলে অনেক উপকথায় প্রমাণ মেলে। সাধারণত বড় পর্বতশ্রেণিতে, গুহায় কিংবা পরিত্যক্ত দুর্গে এদের বসবাস।
ইউরোপীয় গল্পে অনেক সময় ড্রাগনকে দামী বস্তু, যেমন- সোনা, হীরে, জহরত সংগ্রহ করে জমিয়ে রাখতে দেখা গেছে। মোটাদাগে ইউরোপীয় ড্রাগনদের হিংস্র, প্রতিশোধ পরায়ণ, বিধ্বংসীরূপেই বেশি কল্পনা করা হয়। ইউরোপীয় ফ্যান্টাসি বই, যেমন- দ্য হবিট, হ্যারি পটার, ক্রনিকলস অব নার্নিয়ার ফিল্ম অ্যাডাপ্টেশনে ক্লাসিক ইউরোপীয় ড্রাগন দেখা যায়।
২) উইভার্ন (Draco Africanus)
উইভার্ন ড্রাগনেরই একটি দোপেয়ে সংস্করণ। মূলত ১৭ শতকের দিকে এসে দ্বিপদী আর চতুষ্পদী ড্রাগনকে আলাদা করতেই উইভার্ন শব্দটির উদ্ভব হয়। এর পেছনের দিকে এক জোড়া বলিষ্ঠ পা থাকলেও সামনের দুই পায়ের বদলে রয়েছে বাদুরের মতো নখযুক্ত চামড়ার ডানা। মাথার আকারে ড্রাগনের সঙ্গে মিল আছে। তবে এক বা দুই জোড়া শিং এদের ক্লাসিক ড্রাগন থেকে আলাদা করেছে।
এদের লেজের শেষ অংশে বিষাক্ত কাঁটা থাকতে পারে, বিষ থাকে দাঁতেও। হিংস্র, নিষ্ঠুর এবং ভয়ংকর বলে দুর্নাম থাকা এই ড্রাগনের নিঃশ্বাসে আগুন থাকবে। তীক্ষ্ণদৃষ্টির এই দানব পাহাড়ে বাস করে। খাদ্য হিসেবে পছন্দ গবাদিপশু। তবে উইভার্নের আক্রমণ থেকে গ্রামবাসীর গবাদিপশু রক্ষা করতে আসা সাহসী যোদ্ধাকেও খাদ্য হিসেবে গ্রহণে এদের আপত্তি থাকে না। বেশিরভাগ ফিল্ম মিডিয়াতে ড্রাগন হিসেবে উইভার্নকেই দেখানো হয়।
৩) এম্ফিথিয়ার
এম্ফিথিয়ার যেন লিন্ডওয়ার্মের ঠিক উল্টো, সর্পিল দেহে কোনো পা নেই। রয়েছে বিশাল রঙিন দুই পাখা। এটিই একমাত্র ড্রাগন যার পাখায় চামড়ার বদলে রঙিন পালক রয়েছে। এর মুখের আদলেও মিল রয়েছে পাখির সঙ্গে। শারীরিক গড়নের দিক থেকে একধরনের এম্ফিথিয়ার।
৪) লিন্ডওয়ার্ম (Draco Serpentalis)
ডানাবিহীন এই সরীসৃপের একজোড়া পা আছে। উচ্চতায় ১-৩ মিটারের উপরে না গেলেও দৈর্ঘ্যে ১৫ মিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে এই দোপেয়ে সর্পিল দানব। হলুদ, সবুজ বা কমলা রঙের এই প্রাণীর গায়ের রঙ নির্ভর করে এর পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর। এর রয়েছে অসাধারণ ঘ্রাণশক্তি। মজার ব্যাপার হলো মার্কো পোলো নিজে মধ্য এশিয়ায় এই ধরনের দানব দেখতে পেয়েছেন বলে জনশ্রুতি আছে।
৫) উইর্ম
উইর্ম বা ওয়ার্ম মূলত জার্মানিক ড্রাগন। এদের পা বা পাখা থাকতেও পারে, না-ও থাকতে পারে। এদের সারা দেহ আঁশে ঢাকা থাকে। এদের অনেকের চোখে সম্মোহনী ক্ষমতা থাকে, দাতে থাকে বিষ, মুখনিঃসৃত তরলে এসিড। বাসিলিস্ক, নর্স মিথোলজির জরমুনগান্ড্র ইত্যাদি মূলত উইর্ম গোত্রের ড্রাগন।
৬) ড্রেক
সাহিত্যে বা মিডিয়ায় ড্রেক শব্দটি ড্রাগনের প্রতিশব্দ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ড্রেক বলতে মূলত ডানাবিহীন চারপেয়ে ড্রাগনকে বোঝায়। এদের অনেকের নিঃশ্বাসে আগুন থাকে, অনেকের আবার বরফ। ডানা নেই বলে এরা উড়তে পারে না।
এছাড়াও, এশিয়ান উপকথায় জ্ঞানী প্রকৃতি দেবতা হিসেবে ড্রাগনের দেখা মেলে। এসব ড্রাগনের দেহের গড়ন কিছুটা সর্পিল, সাধারণত চারটি পা থাকে, ডানা থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। চীনা, জাপানী, তিব্বতী বা ভুটানী এসব ড্রাগনের থাকে আগুন বা বরফ অথবা বজ্রের শক্তি। থাকে ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমানের জ্ঞান। ইউরোপীয় ড্রাগনেরা শত্রু হলেও এশিয়ার ড্রাগনেরা কিন্তু মানবসভ্যতার পরম বন্ধু!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।