জুমবাংলা ডেস্ক : ক্ষমতা গ্রহণের পর আনু্ষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে সব দলই ‘ইউনূস সরকারের’ প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছে।
সোমবার (১২ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণ অধিকার পরিষদ (পৃথক বৈঠকে দুই অংশ), এ বি পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রাজনৈতিক দলগুলো জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সময় দেবে তারা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে যে সময়ের প্রয়োজন তা দিতে সম্মত হয়েছে তারা। যতদ্রুত সম্ভব ‘ছাত্র-জনতা হত্যাকারী’ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনার দাবি করেছে।
এ ছাড়া মিথ্যা, হয়রানিমূলক ও গায়েবি মামলা-মোকদ্দমার নিষ্পত্তি, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে গণবিরোধী কার্যক্রমের বিচার দাবিসহ বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক রাষ্ট্রীয় ছুটি বাতিলেরও দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাকারী ব্যক্তি ও দল ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, দেশের বর্তমানে যে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়েছে তার জন্য আওয়ামী লীগই দায়ী। এখনও তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরিতে আওয়ামী লীগের প্রধান ভারত থেকে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তারা হামলা-ভাঙচুর করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। যা কোনভাবে হতে দেওয়া যাবে না।
সহিংসতা ও ষড়যন্ত্র দমনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিএনপি এবং অন্যান্য দল সব ধরনের সহযোগিতা করবে জানিয়ে ফখরুল বলেন, বর্তমান ড. মো. ইউনূসের সরকারকে নির্দিষ্ট কিছু সময় দিতে হবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করবে বিএনপি।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার গল্প ফাঁদা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। দ্রুত এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলেও মনে করেন মির্জা ফখরুল। আশা প্রকাশ করেন, আগের মতো অসাম্প্রদায়িক এক সমাজে বাস করবে মানুষ।
এসময় সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান বিএনপির মহাসচিব।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করে বিএনপি।
জামায়াতের বৈঠক
বৈঠক শেষে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে দলীয় দাবিদাওয়া নিয়ে আসিনি। আমরা এসেছি জাতীয় স্বার্থের বিষয়ে আলোচনা করতে। রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ স্তরে এখন জামায়াতে ইসলামী সহযোগিতা করে যাচ্ছে, রাষ্ট্রও আমাদের অনুরোধ করছে। আমরা এটাকে যথেষ্ট বৈধতা মনে করি এবং এর চেয়ে বড় বৈধতা আমাদের প্রয়োজন নেই।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে জামায়াতের আমীর বলেন, ঘটনাগুলোকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মনে হচ্ছে। এটা সত্য, আমাদের এখানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী যারা আছেন, তাদের ওপর বিভিন্ন জায়গায় কিছু হামলা হয়েছে। হামলাটা ধর্মীয় কারণে হয়েছে, নাকি রাজনৈতিক কারণে হয়েছে, এটা খুঁজে বের করতে হবে। তবে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংকটে, ধর্মীয় সংকটে যারা আছেন, তারাই বলছেন, সব হামলাকে ধর্মীয় হামলা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না।
জামায়াতের প্রধান বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বৈঠকে হয়নি। এমনকি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।
তিনি বলেন, বৈঠকে দেশের নানা বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। এখানে দলীয় কথা বলতে আসিনি। তবে জামায়াতকে কেউ নিষিদ্ধ করলেই আমরা নিষিদ্ধ হয়ে যাই না। তারা ভুল কাজ করেছে, যার মাশুল দেশবাসীকে দিতে হচ্ছে।
গণ অধিকার পরিষদের ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘১৫ আগস্টের সাধারণ (সরকারি) ছুটি বাতিল করতে হবে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে। তিনি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে যাবতীয় সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার পক্ষে মত ব্যক্ত করেন।’
এনডিএম প্রধান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কখনোই স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারকে তারা ক্ষমতায় আনবেন না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।