জুমবাংলা ডেস্ক : চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় মো. হারুনকে এনেছে এক প্রতারক। তার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে উধাও হয় সেই প্রতারক। অসহায় হারুন সামনে হেঁটে চলা অসংখ্য মানুষের সহায়তা চেয়েছেন। কিন্তু কেউ তার পাশে না দাঁড়ালেও অবশেষে তাকে সহযোগিতা করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি থানার এসআই মামুন মিয়া। তার সহযোগিতায় হারুন স্বস্তি নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন।
মো. হারুন জানান, লালমনিরহাটের প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল থেকে ঢাকায় চাকরি করতে আসেন প্রতারিত হারুন। বুধবার সারারাত ধানমন্ডি মেডিনোভা হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তার সামনে শতশত মানুষ চলাচল করেছেন। তিনি তাদের কাছে চেয়েছেন সহায়তা। কিন্তু কেউ বিপদে তার পাশে দাঁড়ায়নি। পরে পুলিশ সদস্য মামুন মিয়ার কাছে সহায়তা চান। বিপদের কথা শুনে মামুন মিয়া প্রতারিত হওয়া হারুনকে রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়ান। এরপর সকালে বাইকে করে হারুনকে গাবতলী বাস টার্মিনালে নিয়ে যান এসআই মামুন মিয়া। সেখানে ভুক্তভোগীকে লালমনিরহাটগামী বাসে তুলে দেন পুলিশ সদস্য মামুন।
হারুনের বিপদ সংক্রান্ত একটি ফেসবুক পোস্টও করেছেন এসআই মামুন মিয়া। তিনি তার পোস্টে লেখেন, ‘আজ (১৬ সেপ্টেম্বর) ধানমন্ডি আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে অফিস ডে ডিউটি করছিলাম। সন্ধ্যা নাগাদ হঠাৎ একজন ২৫ বছর বয়সের যুবক সামনে এসে হাজির। ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে আতঙ্কিত অবস্থায় কি যেনো বলার চেষ্টা করছিল আমাকে। আমি বললাম শান্ত হোন, পাশেই বসালাম। তার নাম বলল মো. হারুন, লালমনিরহাট থেকে এসেছে। তার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছিল লোকটা পৃথিবীর ঝামেলা না বোঝা মানুষদের একজন। এক কথায় সরল মানুষ। গতকাল সন্ধ্যা থেকে মেডিনোভা হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই বলল, তাকে চাকরি দেবে বলে নিজ গ্রামের এক লোক তাকে ঢাকায় নিয়ে আসছে। ধানমন্ডি মেডিনোভা হাসপাতালের সামনে এসে তার সঙ্গে থাকা পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে ওই লোক স্যারের সঙ্গে দেখা করতে যাবে বলে রেখে গেছে, আর আসেনি। সারারাত জেগে হাসপাতালের সামনে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে ছিল ভুক্তভোগী।
আমি বললাম আপনি এখন কি চাচ্ছেন? একটাই কথা বলল ‘আমি বাড়ি যেতে চাই, ঢাকাতে আর কোনোদিন আসবো না।’ আশেপাশে খোঁজ নিয়ে দেখলাম গাবতলী ছাড়া বাস পাওয়া যাবে না। ডিউটি শেষ করে তাকে নিয়ে ছুটলাম গাবতলী। গাড়ি চালানো অবস্থায় লোকটা একটা কথাও বলেনি। এ ধরনের মানুষগুলোকে আমার খুব আপন মনে হয়। কারণ আমার জন্মটাও এমন দুজন সরল মানুষকে দিয়েই, মানে আমার বাবা-মায়ের কথা বলছি।
বাসে ওঠার আগে লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এতো মানুষ থাকতে আপনি আমার মতো একজন পুলিশের কাছে কেনো আসলেন? বলল ‘স্যার সারাদিন অনেক মানুষরে বলছি কেউ কোনো সাহায্য করে নাই। অবশেষে বাধ্য হয়েই আপনাকে বললাম।’ শেষে হঠাৎ বলল, ‘স্যার আপনার সঙ্গে একটা ছবি তুলে দেন, আমি বললাম আপনার তো ফোন নেই ছবি দিয়ে কি করবেন?’ বলল কখনো সুযোগ হলে নিয়ে নেবো কোনো মাধ্যমে ছবিটা, দেখা তো হবে না কোনোদিন হয়তো।’ এ বলে বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করলো। তখন মনে হলো তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিছুক্ষণ কান্না করতে পারলে নিজেকে হালকা লাগতো। আমারও মনটা কয়েকদিন যাবৎ ভারী হয়ে আছে।
ধানমন্ডি থানার এসআই মামুন মিয়া বলেন, মানবসেবার ব্রত নিয়েই আমরা পুলিশরা দায়িত্ব পালন করছি। এটা বিশেষ কিছু করা নয়। মানুষ হিসেবে এবং আমি একজন সরকারি সেবাদাতা হিসেবে যা করার দরকার তাই করছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।