জুমবাংরা ডেস্ক : শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ পর্যন্ত গত ছয় দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ আটজন উপাচার্য (ভিসি) পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য, প্রক্টর, প্রভোস্টসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকেও অনেকে পদত্যাগ করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে আরো অনেক ভিসি পদত্যাগ করতে পারেন বলে জানা গেছে।
পদত্যাগ করা উপাচার্যরা হলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম।
গতকাল শনিবার পদত্যাগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। এ ছাড়া সাতটি হলের প্রভোস্টরাও পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন উপাচার্য। এর আগে হল প্রভোস্টরা উপাচার্যের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে গত শুক্রবার রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে আমার সোহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। স্বাভাবিক সৌজন্যতার জায়গা থেকেই আমি এই আলোচনা করেছি। আমার পদত্যাগপত্র আগেই তৈরি ছিল। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, দীর্ঘদিন শিক্ষক নেতা ছিলাম।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমার মনে হয়েছে, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই আমার পদত্যাগ করা দরকার।’
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অগ্রিম অবসরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন করেছেন বলে কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অনেক আগে থেকেই আমার ভাবনা ছিল। চলমান সব পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনই অগ্রিম অবসরের জন্য আবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর দিয়েছি।’
গত বছর ১৫ অক্টোবর অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।
৪ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব বুঝে নেন। আট মাস দায়িত্ব পালন শেষে গতকাল তিনি পদত্যাগ করেন।
ঢাবির সাত হল রোকেয়া হল, শামসুন নাহার, বিজয় ৭১, বঙ্গবন্ধু হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়া হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট ছাড়াও জহুরুল হক হলের চারজন আবাসিক শিক্ষকও পদত্যাগ করেছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাবির প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডির সব সদস্য পদত্যাগ করেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদও গতকাল পদত্যাগ করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কারণে আমার পদ থেকে পদত্যাগ করছি। চ্যান্সেলর বরাবর আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’
এর আগে শাবিপ্রবির প্রায় সব হলের প্রভোস্ট, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পদত্যাগ করেন। বাকি যাঁরা আছেন সবাই পদত্যাগ করবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামের মধ্যে পদত্যাগ করেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা প্রক্টর, প্রভোস্টসহ ৯ জন। তবে তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগেরও দাবি তুলেছেন।
এর আগে গত বুধবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং আবাসিক হলগুলোর প্রভোস্টদের দুই দিনের মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নোবিপ্রবির সমন্বয়করা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলমান আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রক্টরিয়াল বডির সব সদস্যসহ তিনটি আবাসিক হলের হল প্রভোস্ট। গতকাল শনিবার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ।
এদিকে গত শুক্রবার থেকে টানা দুই দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং প্রক্টর-প্রভোস্টদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন চবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ প্রশাসন একে একে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে শুরু করেছে। গতকাল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। গত কয়েক দিনে আরো একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।