জুমবাংলা ডেস্ক : শহর, বন্দর, গ্রাম-সব জায়গায় গ্রীষ্মের রুদ্ররোদ। প্রচণ্ড তাপে গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ, হিট স্ট্রোকে মারা যাচ্ছেন মানুষ। তীব্র গরমে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। দাবদাহ বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রোগবালাইও বাড়ছে। গরম থেকে বাঁচতে নদী-খাল-বিল ও ডোবায় নামছে মানুষ, ঘটছে দুর্ঘটনা। সর্বত্র হাঁসফাঁস অবস্থা; এই অবস্থা থেকে বাঁচতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করেছে মানুষ। মঙ্গলবার সারা দেশে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকার ওয়ারীতে ছাপাখানার কর্মী, ময়মনসিংহে শিলপাটার কর্মী ও মিল শ্রমিক, কুমিল্লায় রাজ জোগালি, জামালপুরে ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। হিট স্ট্রোকজনিত কারণে এদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া গরম থেকে বাঁচতে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে নেমে তিন শিশু মারা গেছে। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে চারটি পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিকে তিন দিনের হিট অ্যালার্টের দ্বিতীয় দিনেও আবহাওয়া অফিস তাপমাত্রা কমার সুখবর দিতে পারেনি। তবে জানানো হয়েছে-দাবদাহ কমতে হলে শক্তিশালী ঝড় দরকার। কিন্তু সেই ঝড়েরও কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
পরপর দুই দিন ঢাকার তাপমাত্রা কমার পর মঙ্গলবার আবার বেড়েছে। এই অবস্থা আজও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। মঙ্গলবার রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে আগামী ১ সপ্তাহে পুরো দেশে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। আর মে মাসের শুরু থেকে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে আসতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে, ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি ছিল এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ওইদিনই রাজধানীর তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিও ছিল এ বছরে রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তবে রোববার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নগরীর তাপমাত্রা ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যায়। ওইদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সোমবার ঢাকার তাপমাত্রা আরও কমে হয় ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশের ৪০টির বেশি জেলার বিভিন্ন স্থানে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলছে আবহাওয়া বিভাগ।
এদিকে মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। অর্থাৎ বুধবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে গরমের অনুভূতি কিছুটা হলেও কমবে। তবে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিও বিরাজ করতে পারে কিছুটা। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশে চলমান তাপপ্রবাহ আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই সময়ের শেষ দিকে দেশের উত্তর-পূর্বাংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারে।
রাজধানীতে সরেজমিন ঘুরে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে, তীব্র দাবদাহের কারণে অধিকাংশ মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজনে যারা বাইরে বের হচ্ছেন, তারাও সতর্ক রয়েছেন। তবে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষরা জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হচ্ছেন। বাইরে বের হওয়া মানুষদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, আপাতত তাপমাত্রা কমার কোনো সুখবর নেই। তাপমাত্রা কিছুটা কমা-বাড়ার মধ্যে আরও কিছুদিন এভাবে চলবে। তবে শক্তিশালী ঝড় হলে তাপমাত্রা কমে যাবে। আপাতত তেমন কোনো ঝড়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।