জুমবাংলা ডেস্ক : তাপসহিষ্ণু নতুন গমের তিনটি জাত উদ্ভাবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) গবেষক দল। নতুন গমের উদ্ভাবিত জাতগুলো অধিক তাপসহিষ্ণু এবং উচ্চ তাপমাত্রায় উচ্চ ফলন ধরে রাখবে এ প্রত্যাশা গবেষকদের।
কৃষি অনুষদের কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান এবং তার শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ গবেষণায় উদ্ভাবনে শেষপ্রান্তে তাপ সহিষ্ণু তিনটি গমের জাত। তার এই গবেষণায় কারিগরি দিক নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এন্ড ট্রেনিংয়ের অর্থায়নে চলমান এই কাজে গবেষণায় তিনটি জাতের মধ্যে এক জাতের গম রোপণের ১০০ দিনের মধ্যেই ফলন দেয়। গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিটি গম গাছে শিষের সংখ্যা ও প্রতি শিষে পুষ্ট দানার সংখ্যা বেশি। নতুন জাতের এই গম গাছ কান্ডে ও ত্বকে পরিণত হওয়া (মোমের আবরণ)-এর পরিমাণ বেশি হওয়ায় এই জাতগুলো অধিক তাপসহিষ্ণু এবং উচ্চ তাপমাত্রায় উচ্চ ফলন ধরে রাখবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।
গবেষকরা জানান, ৩টি অনুমোদিত জাত ও একটি অগ্রবর্তী সারির বারি-৪ গমের ক্রস প্রজননের মাধ্যমে এইচএসটিইউ ডাবিস্নউ-১,এইচএসটিইউ ডাবিস্নউ-৪ ও এইচএসটিইউ ডাবিস্নউ-৮তিনটি নতুন ধরনের তাপ সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়সহ পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, যশোর, সিলেট ও জয়পুরহাট মোট ৮টি এলাকায় তাপ সহিষ্ণু এই জাতগুলোর পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়েছে বলে জানান হাবিপ্রবির কৃষি অনুষদের কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান।
মাঠ পরিদর্শনে মনে হয়েছে যে সঠিক ভাবেই গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখন ফলন পর্যন্ত অপেক্ষায় আছি। তবে যদি এর ফলন প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৪টন হয় তাহলে কৃষকদের জন্য একটি ভালো জাত হবে এবং দেশের গম উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। তারপরে এটি অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গম উৎপাদনে তাপমাত্রা একটি অন্যতম সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে। তাই তাপসহিষ্ণু গমের জাত উদ্ভাবনে ২০১২ সাল থেকে গবেষণা করে যাচ্ছি। গত বছর প্রাথমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেছি। সেই পরীক্ষা থেকে তিনটি অ্যাডভান্স লাইন চিহ্নিত করেছি যেগুলো জাত হিসেবে ছাড়করণ করা যেতে পারে। এই তিন জাতের গমের ফলন পরীক্ষার জন্য এবছর দেশের ৮ অঞ্চলে গমের জাতগুলো চাষাবাদ করা হচ্ছে। আশা করছি যে তাপ সহিষ্ণু উচ্চফলনশীল গমের জাত উদ্ভাবন করতে পারব।
তিনি জানান, প্রতিবছর এটাকে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ এবং সাবধানতার সঙ্গে অগ্রবর্তী সারিগুলোকে পরিচর্যা ও সঠিক ডাটা নিয়েছিলাম আমরা। আমরা আশাবাদী উদ্ভাবণের শেষপ্রান্তে জাতগুলো রয়েছে তা দেশের জন্য একটা বড় অর্জন হবে। যা গমের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ তাপ সহিষ্ণু এবং হেলে পড়া রোধ করবে।
এই গবেষণার ওপর প্রফেসর ড.মো. হাসানুজ্জামানের অধীনে ইতোমধ্যেই ১ জন পিএইচডি ও ৫ জন মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। অনুমোদন পাওয়া এসিআই উদ্ভাবিত এসিআই গম-১ ও এসিআই গম-২ এর উদ্ভাবনী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন প্রফেসর ড. মো. হাসানুজ্জামান। সেইখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে তাপসহিষ্ণু গমের জাত উৎপাদনে গবেষণা করে যাচ্ছেন তিনি। তার এই গবেষণায় কারিগরি দিক নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান।
সম্প্রতি এই গবেষণা পর্যবেক্ষণ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার এবং বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুক। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.এম কামরুজ্জামান, কৃষি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড.বিধান চন্দ্র হালদার,জনসংযোগ শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. শ্রীপতি সিকদার, কলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রফেসর মো. আরিফুজ্জামানসহ উপস্থিত ছিলেন মাস্টার্স অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।