বিশেষ করে শীতকালে এ ঘটনার মুখোমুখি হই আমরা। দরজার ধাতব হাতল স্পর্শ করলে বেশ ঠান্ডা মনে হয়। সে তুলনায় প্লাস্টিকের কোনো কিছু দেখবেন অত ঠান্ডা লাগছে না। প্লাস্টিক ও ধাতু—দুটি ভিন্ন ধরনের পদার্থ। আচার-আচরণ বা বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে এর পেছনের বিজ্ঞান বেশ মজার। চলুন, তা জেনে নেওয়া যাক।
কোনো বস্তু স্পর্শ করলে সেটা ঠান্ডা বা গরম লাগবে কি না, তা আমাদের ত্বক, বিশেষ করে হাতের তাপমাত্রা আর ওই বস্তুর তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে। ত্বকের তাপমাত্রা বস্তুর তুলনায় বেশি হলে সেটিকে ধরলে ঠান্ডা লাগবে। আর হাতের তাপমাত্রা কম হলে ওই একই বস্তু ধরলে মনে হবে গরম।
স্বাভাবিকভাবে তাপ সব সময় উচ্চ তাপমাত্রা থেকে নিম্ন তাপমাত্রার অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। শীতকালে পরিবেশের তাপমাত্রা আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে কম থাকে। তা ছাড়া বাতাসের আর্দ্রতাও কম হয়। ফলে শরীর থেকে তাপ পরিবেশে মিশে গিয়ে একই তাপমাত্রা, অর্থাৎ ভারসাম্য তৈরি করতে চায়। দেহের তাপমাত্রা তার স্বাভাবিক তাপমাত্রার (৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের) চেয়ে কম হলেই শরীরে ঠান্ডা লাগা শুরু হয়। একই ঘটনা সব বস্তুর ক্ষেত্রেই ঘটে। অর্থাৎ পরিবেশের সঙ্গে তাপের আদান-প্রদান হয়।
ধাতব পদার্থের আণবিক গঠন অন্যান্য পদার্থের তুলনায় একটু ভিন্ন। এখানে পরমাণুগুলো বিশেষ ধরনের সুসজ্জিত কাঠামোতে সাজানো থাকে। বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে বলা হয় ‘ল্যাটিস’। এর ফলে ধাতব পদার্থের পৃষ্ঠে তৈরি হয় মুক্ত ইলেকট্রনের এক মহাসমুদ্র। এখানে ইলেকট্রন খুব সহজে ছোটাছুটি করতে পারে। তাই ধাতব পদার্থে খুব দ্রুত তাপ ও বিদ্যুৎ চলাচল করতে পারে।
এ কারণে ধাতব পদার্থ যেমন দ্রুত তাপ গ্রহণ করে গরম হতে পারে, তেমনি দ্রুত তাপ ছেড়ে দিয়ে ঠান্ডাও হতে পারে। কোনো পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ কত ভালোভাবে চলাচল করতে পারে, তা বোঝানো হয় ‘তাপ পরিবাহিতা’র সাহায্যে। ধাতব পদার্থের আণবিক গঠনের কারণে এদের তাপ পরিবাহিতা অনেক বেশি হয়। প্লাস্টিকের অণুর কাঠামো এরকম নয়। এদের পৃষ্ঠে মুক্ত ইলেকট্রনও থাকে না। ফলে তাপ গ্রহণ বা ছাড়ার ক্ষেত্রে ধাতব পদার্থের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে প্লাস্টিক।
দৈনন্দিন জীবনে ধাতব জিনিসপত্রের মধ্যে স্টেইনলেস স্টিল আমরা বেশি ব্যবহার করি। এর তাপ পরিবাহিতার পরিমাণ ১৫ ওয়াট/মিটার/কেলভিন। এর মানে, সহজ করে বললে, এক মিটার পুরুত্বের একটি বস্তুর মধ্য দিয়ে প্রতি কেলভিন তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য ১৫ ওয়াট তাপ শক্তি প্রবাহিত হতে পারে।
অন্যদিকে প্লাস্টিকের তাপ পরিবাহিতা ০.০২ থেকে ০.০৫ ওয়াট/মিটার/কেলভিন। মানে এক মিটার পুরুত্বের একটি বস্তুর মধ্য দিয়ে প্রতি কেলভিন তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য ০.০২ থেকে ০.০৫ ওয়াট তাপ শক্তি প্রবাহিত হতে পারে। অর্থাৎ প্লাস্টিক স্টিলের মতো এতো ভালোভাবে তাপ ছাড়তে বা গ্রহণ করতে পারে না। তাই স্টিলের তুলনায় প্লাস্টিক ধীরে ঠান্ডা বা গরম হয়। তার ওপর স্টিলের চেয়ে প্লাস্টিক বেশি পরিমাণ তাপ ধরে রাখতে পারে।
ধাতব পদার্থ যেমন খুব দ্রুত তাপ ছেড়ে দিয়ে ঠান্ডা হয়, তেমনি খুব দ্রুত তাপ গ্রহণও করতে পারে। ফলে আমরা যখন উষ্ণ হাত দিয়ে ধাতব জিনিস ধরি, তখন হাতের তাপমাত্রা দ্রুত ধাতব পদার্থে চলে যায়। ফলে ধরার সময় খুব ঠান্ডা মনে হলেও একটু পরই ঠান্ডাভাব দূর হয়ে যায়। প্লাস্টিকের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। তাপ পরিবাহিতা কম হওয়ায় ঠান্ডা বা গরম হতে তুলনামূলক বেশি সময় নেয় প্লাস্টিক। এ কারণেই মূলত প্লাস্টিকের চেয়ে ধাতব পদার্থ ধরলে শীতের দিনে বেশি ঠান্ডা লাগে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।