তামিমের অবসরে সতীর্থরা দিলেন হৃদয় ছোঁয়া বার্তা

দীর্ঘ দেড় বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে জাতীয় দলে না ফেরার বিষয়টি স্পষ্ট করলেন তামিম ইকবাল। সাবেক এই টাইগার অধিনায়ক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। লাল-সবুজ জার্সিতে তার বিদায় স্বভাবতই দেশের ক্রিকেট ভক্তদের মনে ক্ষত তৈরি করেছে। যা ছুঁয়ে গেছে দীর্ঘদিন একসঙ্গে খেলা সতীর্থ ক্রিকেটারদেরও। সামাজিক মাধ্যমে তারা তামিমকে নিয়ে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন।

 তামিমের অবসরে

২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রথমদফায় অবসর নিলেও, তামিমের সেই সিদ্ধান্ত টিকলো মোটে একদিন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে অবসর ভেঙে ফেরার পর খেললেন কেবল ২ ওয়ানডে। এরপর থেকে তার জাতীয় দলে ফেরার প্রশ্নে কোনো উত্তর মিলছিল না। আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে কেন্দ্র করে সেই জল্পনা আরও জোরালো হয়। এরই মাঝে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তামিম জানালেন– ‘তার ক্রিকেট অধ্যায় শেষ।’

প্রায় কাছাকাছি সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছিল তামিম ও মুশফিকুর রহিমের। পুরোনো স্মৃতি উল্লেখ করে মুশফিক বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, ‘তোমার অবসরকালে আমি জানাতে চাই, তোমার অর্জনগুলো নিয়ে আমি কতটা গর্বিত তামিম। দোস্ত, তুমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের একজন অসাধারণ প্রতিনিধি ছিলে এবং বিশ্বমানের একজন ব্যাটার। দুবাইয়ের সেই জুটি আমার সারাজীবন মনে থাকবে, বিশেষ করে যখন তুমি চোট পাওয়া আঙুল নিয়েও ব্যাটিং করেছিলে। এটি তোমার দেশের প্রতি নিবেদন ও খেলাটার প্রতি ভালোবাসা স্পষ্ট করে। অবসর ভালো কাটুক দোস্ত। তোমাকে মাঠে খুব মিস করব, ক্রিকেটের কল্যাণে দুর্দান্ত এক বন্ধু পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ।’

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শুভকামনা জানিয়ে ক্রিকেটে তামিমের অবদান নিয়ে লিখেছেন, ‘তামিম, দীর্ঘ ও চমৎকার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তোমার অসাধারণ অর্জনগুলোর জন্য অনেক অভিনন্দন। তুমি অনেক কিছু অর্জন করেছ এবং বাংলাদেশের দলের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছ। আমার মনে হয়, এটি ছিল আমাদের শেষবারের মতো বাংলাদেশের হয়ে একসঙ্গে ব্যাটিং। তোমার সঙ্গে খেলতে পারা এবং মাঠের ভেতরে-বাইরে এত স্মৃতি ভাগাভাগি করতে পারা সত্যিই অনেক আনন্দের ছিল। আমি তোমার অবসরজীবনের জন্য শুভকামনা জানাই এবং ভবিষ্যতের সকল কাজে সাফল্য কামনা করি। তোমার রেখে যাওয়া ঐতিহ্য চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার ও বর্তমানে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের দায়িত্বে থাকা শাহরিয়ার নাফিসও। একসময় তামিমের সঙ্গে ওপেনিং করা সাবেক এই তারকা লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তোমার অবদান বাংলাদেশ সব সময় মনে রাখবে তামিম ইকবাল।’

অবসরের ঘোষণা দেওয়ার আগে জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও নাকি অনুরোধ করেছিলেন তামিমকে। তবে অগ্রজ এই ক্রিকেটার শুনেছেন মনের কথা। তার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে শান্ত লিখেছেন, ‘প্রিয় তামিম ভাই আপনার নেওয়া সিদ্ধান্তকে আমি আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। ২০১৬ সালে আবাহনীর হয়ে প্রথমবার আপনার সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করা থেকে শুরু করে জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলার সুযোগ, আপনার কাছ থেকে শিখেছি অসংখ্য কিছু। আপনার ক্রিকেটীয় মেধা, সহ-খেলোয়াড়দের প্রতি আপনার যত্ন ও উদারতা আমাকে বারবার মুগ্ধ করেছে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আপনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত অবশ্যই আপনাকে ভাবতে হয়েছে এবং সেটিকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। তবে ড্রেসিংরুম এবং ২২ গজে আপনার সঙ্গ আমরা ভীষণভাবে মিস করব। আমি গর্বিত যে এমন এক কিংবদন্তি ব্যাটারের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি এবং জাতীয় দলে আপনার সঙ্গে খেলতে পেরেছি। দোয়া করি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের সময়গুলো আনন্দময় হোক। ভালো থাকবেন।’

জাতীয় দলের তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ের অভিজ্ঞতা আছে সৌম্য সরকারেরও। তিনি লেখেন, ‘নতুন শুরুর জন্য এবং সারা জীবনের অমূল্য স্মৃতিগুলোর জন্য শুভেচ্ছা। অবসর কোনো শেষ নয়, বরং এটি এক নতুন সুন্দর অধ্যায়ের সূচনা। সামনের যাত্রাটা উপভোগ করুন। ভালো কাটুক অবসরকাল। মাঠে আপনার অভাব অনুভব করব।’

এবার সাকিবের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নির্বাচকরা

জাতীয় দলের আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ লিখেছেন, ‘আপনার অবসরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেটে একটি যুগের অবসান ঘটল। দেশের অন্যতম সেরা ওপেনার হিসেবে নিজের দক্ষতা, নিবেদন ও নেতৃত্বগুণ দিয়ে আপনি এই খেলায় অমোচনীয় ছাপ রেখে গেলেন। বড় সেঞ্চুরি কিংবা চাপের মুখে দারুণ সব পারফরম্যান্সের অবদান আপনাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সত্যিকারের আইকন বানিয়েছে।’