শেখ হাসিনা আমলে টাইগার আইটি কোম্পানিকে অবৈধ ও অনৈতিক সুবিধা প্রদান এবং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে নানা দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। কারণ তারাই এই কোম্পানিকে নানা টেন্ডার এবং ঠিকাদারির কাজ দিত।
টাইগার আইটি কোম্পানিকে নিয়ে প্রচন্ড সমালোচনার মুখে পড়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। তবে বিআরটিএ অথরিটি নিজেদের গাঁ বাচাঁনোর জন্য নানা কথা বলে যাচ্ছেন এবং নিজেদের নির্দোষ দাবি করছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী মূল্যায়ন কমিটির যারা টাইগার আইটিকে কাজ দিয়েছিল তাদের কেউ এখন আর কেউ নেই। কাজেই অভিযোগ প্রমাণ করা সহজ হবে না।
হাসিনা আমলে যখন টাইগার আইটিকে টেন্ডার দেওয়া হতো তখন প্রকল্পের খরচ ইচ্ছামত ধরা হতো। এতে করে সরকারের ক্ষতি হলেও ঠিকাদারি এই প্রতিষ্ঠান বেশি লাভবান হচ্ছে। বিআরটিএ এর স্মার্টকার্ড নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে এবং তাতে গ্রাহকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে টাইগার আইটি এর দুর্নীতি ও অবহেলার কারণেই।
সূত্র জানায়, টাইগার আইটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় ওরাকল, সিসকোর মতো মার্কিন প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটির সঙ্গে কোনো কাজ করছে না। নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে কাজ করার জন্য ইউরোপে কয়েকটি শেল কোম্পানি (মূলত মুদ্রা পাচারের লক্ষ্যে) খুলেছেন তিনি।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন, ঢাকা ওয়াসা, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, এনআইডি অনুবিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে আইবিসিএস-প্রাইমেক্স নামে ছদ্মবেশী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কয়েকশ কোটি টাকার কাজ করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এর সবকিছুই অডিট ও মূল্যায়ন ছাড়াই।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের স্মার্টকার্ড মুদ্রণ সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পেও দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে টাইগার আইটির বিরুদ্ধে। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটিকে ২০১৯ সালে সাড়ে ৯ বছরের জন্য এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানকে সাড়ে ৬ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করে।
বর্তমানে বিআরটিএর স্মার্টকার্ডসহ অন্যান্য সরকারি প্রকল্পে নতুন করে যুক্ত হতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী শাহনাজ সিদ্দিক। কালো তালিকাভুক্ত হিসেবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের কোনো টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না টাইগার আইটি এবং চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান, এমনকি ২০২৫ সাল পর্যন্ত কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক টেন্ডারে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা নেই।
জানা গেছে, জাল, অবৈধ ও ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠেকাতে ২০১১ সালে ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত ডিজিটাল স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রবর্তন করে বিআরটিএ। শুরু থেকেই প্রকল্পে যুক্ত টাইগার আইটি।
বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় ২০১৯ সালের আগস্টে ‘টাইগার আইটি’র সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বিআরটিএ। নতুন টেন্ডার করে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সকে নিয়োগ দিলেও চুক্তির মেয়াদ ২০২১-এর জুন পর্যন্ত স্মার্টকার্ডের সার্ভার এবং ডেটাবেজ হস্তান্তরে গড়িমসি করে।
বিআরটিএ এর ভাষা মতে টাইগার আইটি এর সাথে বর্তমানে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। এবং তারা একসাথে আর কাজ করছেন না। শেখ হাসিনা নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিখ সিদ্দিক এবং অভেদুল কাদেরের কারণেই টাইগার আইটি এত প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পেরেছে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী টাইগার আইটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান দুবাইতে অবস্থান করছেন। তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। ২০২০ সালে ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স কিনতে প্রকল্প অনুমোদন দায় মন্ত্রিসভা। কোন টেন্ডার ছাড়াই তা অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। প্রতিটি কার্ড এর ক্ষেত্রে ১০ গুণ বেশি দাম ধরা হয়েছিল। প্রকাশ্য দুর্নীতি হল তখন কেউ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।