জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের আরও তিনটি তৈরি পোশাক কারখানাকে ‘সবুজ কারখানা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। শনিবার (১৫ অক্টোবর) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি’র (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল। তিনি জানান, নতুন করে সবুজ কারখানার সনদ পাওয়া তিন কারখানার মধ্যে রয়েছে দুটি গাজীপুরের ও একটি ময়মনসিংহের। এই তিন পোশাক কারখানাকে দেওয়া হয়েছে প্লাটিনাম রেটিং।
উল্লেখ্য, সবুজ পোশাক কারখানা ভবনের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে আছে। দেশের ৫৭টি পোশাক কারখানা প্লাটিনাম রেটিং, ১০৫টি গোল্ড রেটিং ও ১০টি সিলভার রেটিং পেয়েছে। এছাড়া চারটি কারখানা কোনও রেটিং পায়নি, তবে সনদ পেয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ইউএসজিবিসি এই কারখানাগুলোকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। সবুজ কারখানার তালিকায় বাংলাদেশের পরের অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া।
মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, গাজীপুরের এ সি নিটওয়্যার লিমিটেডকে গত ১০ অক্টোবর স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল। প্রতিষ্ঠানটিকে ৮৭ পয়েন্ট দিয়েছে ইউএসজিবিসি। গাজীপুরের সিল্কেন সুইং লিমিটেড গত ১১ অক্টোবর স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল। প্রতিষ্ঠানটিকে ৯২ পয়েন্ট দিয়েছে ইউএসজিবিসি। ময়মনসিংহের সুলতানা সোয়েটার্স লিমিটেডকে গত ১২ অক্টোবর স্বীকৃতি দিয়েছে ইউএসজিবিসি। প্রতিষ্ঠানটিকে ৮১ পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশের পোশাক খাতে মোট পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৬-এ।
জানা গেছে, বাংলাদেশের আরও প্রায় ডজনখানেক কারখানা পরিবেশসম্মত সবুজ কারখানার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (লিড) সনদ পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বর্তমানে রেমি হোল্ডিংস ও ফতুল্লা অ্যাপারেলস ১১০-এর মধ্যে ৯৭ পয়েন্ট নিয়ে যৌথভাবে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সংস্কার, পারফর্ম্যান্স, জ্বালানি, পানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ কয়েকটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে কারখানাগুলোকে সবুজ কারখানা স্বীকৃতি দেয় ইউএসজিবিসি।
এদিকে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এবং সবুজ পোশাক কারখানার দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ইফেকটিভ ম্যানেজমেন্ট অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ক্যাটাগরিতে সেরা হিসেবে পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ-কে মনোনিত করা হয়েছে।
মূলত, বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে একটি ইউএসজিবিসি। তারা লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন বা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে।
সাধারণ স্থাপনার চেয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫-২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। এছাড়া ইউএসজিবিসি লিড সনদ পেতে স্থাপনা নির্মাণে অন্তত ৯টি শর্ত পরিপালন করতে হয়।
এই সনদ পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসি’র তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করেও লিড সনদের জন্য আবেদন করা যায়। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি।
এর আগে গত বছর (২০২১ সালে) সবুজায়নে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) পক্ষ থেকে লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড তথা বিশ্বে প্রথম ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল অ্যাওয়ার্ড পায় বিজিএমইএ। বৈশ্বিক পোশাক শিল্প জগতে বিজিএমইএ ই হচ্ছে একমাত্র সংগঠন যারা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই পদক অর্জন করে। এছাড়াও বিশ্বের শীর্ষ ১০ পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার মধ্যে ৯টির মালিক বাংলাদেশ।
দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক ও মুখপাত্র মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, গ্রিন ফ্যাক্টরিতে বাংলাদেশ সবার শীর্ষে। এটি দেশের পোশাক খাতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। এই সবুজ কারখানার কারণে বিশ্বমন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের পোশাক কারখানা দিকে ক্রেতাদের মনোযোগ রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও ক্রেতাদের বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রতি আগ্রহ কমছে না।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের মে মাসে বাংলাদেশের ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও বিশ্বের প্রথম এলইইডি প্লাটিনাম সার্টিফায়েড কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ওই বছর পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তার দেখানো পথ ধরেই দেশে একটার পর একটা পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা গড়ে উঠছে। উজ্জ্বল হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি।
এর পরের বছর, ২০১৩ সালে রাজধানীতে রানা প্লাজা ভবন ধসে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি প্রাণ হারান এক হাজার ১৩৪ জন। সেই ঘটনার পর সবুজ উদ্যোগে প্রচুর বিনিয়োগ শুরু করেন পোশাক উদ্যোক্তারা।
২০১৪ সালে সবুজ কারখানা স্থাপন করা হয় আরও তিনটি। ২০১৫ সালে হয় ১১টি। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে স্থাপন করা হয় যথাক্রমে ১৬, ১৮ ও ২৪টি। ২০১৯ সালে আরও ২৮টি সবুজ কারখানা গড়ে তোলেন উদ্যোক্তারা। এছাড়া ২০২০ ও ২০২১ সালে ২৪টি করে আরও ৪৮টি কারখানা গড়ে তোলা হয়। সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা এখন ১৭৬টিতে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকশত পোশাক কারখানা পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা হতে ইউএসজিবিসির অধীনে কাজ করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।