জুমবাংলা ডেস্ক: তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মোগল আমলের নারী মসজিদ। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এ মসজিদের স্থাপত্যরীতিতে মোগল ভাবধারার ছাপও সুস্পষ্ট। মসজিদের ভেতরে প্রবেশ পথের মূল দরজায় ফারসি ভাষায় পাথরে খচিত শিলালিপি নিয়ে রয়েছে লোমহর্ষক বর্ণনা। দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদক আমানুল হক আমান-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
রাজশাহী শহর থেকে ৪৯ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ কোনে বাঘা উপজেলা সদরে হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলার (রহ.) ছেলে হযরত শাহ আব্দুর হামিদ দানিশ মন্দ (রহ.) মাজারসংলগ্ন এলাকায় এই মসজিদটি অবস্থিত। তবে মসজিদটি বর্তমানে বিলুপ্তের পথে।
মোগল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম ওই মসজিদটি পুনরায় সংস্কার করে চালুর দাবি এলাকাবাসীর
জানা যায়, বাঘা উপজেলা সদরে হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলার (রহ.) ছেলে হযরত শাহ আব্দুর হামিদ দানিশ মন্দ (রহ.) মাজারসংলগ্ন এলাকায় এ মসজিদ অবস্থিত।
পাশে রয়েছে হযরত জহর শাহ (রহ.) এর মাজার। মসজিদ দেখতে বছরজুড়ে এখানে আসেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। তবে পর্যটকদের আকর্ষণ ধরে রাখা বা ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকে থাকা এ স্থাপনা সংরক্ষণে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
৩ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের অবস্থান প্রায় ৩০ ফুট সুউচ্চ টিলার ওপর। বর্গাকার মসজিদটির দৈর্ঘ্য ২৭ ফুট, প্রস্থ ১৩ ফুট। চারপাশের দেয়াল তিন ফুট ৬ ইঞ্চি চওড়া। উত্তর ও দক্ষিণ লম্বাকৃতির মসজিদের পূর্ব দিকে রয়েছে খিলান আকৃতির প্রবেশ পথ। মসজিদের ইট ধূসর বর্ণের।
এ ইটের দৈর্ঘ্য ১০ ইঞ্চি, প্রস্থ ৬ ইঞ্চি এবং চওড়া দেড় ইঞ্চি। বর্তমান যুগের ইটের চেয়ে এর আকৃতি একেবারেই আলাদা। দর্শনার্থী ও নামাজিদের ওঠা নামার জন্য মসজিদের পূর্ব দিকে রয়েছে প্রবেশ পথ।
ঐতিহাসিক তথ্য মতে, প্রায় ৫০০ বছর আগে পাঁচ সঙ্গীসহ সুদূর বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য বাঘায় এসেছিলেন হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রহ.)। তিনি বসবাস শুরু করেন পদ্মা নদীর কাছে কসবে বাঘা নামক স্থানে।
আধ্যাত্মিক শক্তির বলে এ এলাকার জনগণের মধ্যে ইসলাম প্রচারের ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন।
বাঘা ওয়াকফ এস্টেটের দেয়া তথ্য মতে, হযরত শাহদৌলার (রহ.) ছেলে হযরত শাহ আব্দুল হামিদ দানিশ মন্দের (রহ.) এর মৃত্যুর পর তার তৃতীয় পুত্র মাওলানা শাহ আব্দুল ওয়াহাব (রহ.) বাঘার খানকার দায়ীত্বভার গ্রহণ করেন। ওই সময় দিল্লি সম্রাট শাজাহানের প্রেরিত শাহী ফরমান যোগে ৪২টি মৌজা মাদদ মাস স্বরূপ দান লাভ করেন (১০৩০ হিজরি)।
তখন শালিমানা ছিলো আট হাজার টাকা। হযরত আব্দুল ওয়াহাবের মৃত্যুর পর তার দুই পুত্রের মধ্যে হযরত শাহ মোহম্মদ রফিক (রহ.) ১০২৮ হিজরি সনে ২০৩৭ আনা শালি আনার সম্পত্তি ওয়াকফ করেন। ওয়াকফ এস্টেটের মোতয়াল্লি (৬ষ্ঠ রইশ) সাইজুল ইসলামের আমলে রইশ পরিবারের ও বাইরের পর্দানশিন নারীদের জন্য মসজিদ নির্মাণ করেন।
তারা এ মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকে থাকা এ শৈল্পিক স্থাপনার শরীর জুড়ে এখন শুধুই অযত্ন আর অবহেলার ছাপ। মসজিদের দেয়ালের কিছু কিছু অংশের পলেস্তারা ধসে পড়েছে। বর্তমানে এ মসজিদে আর নামাজ আদায় হয় না।
ওয়াকফ এস্টেটের বর্তমান মোতয়াল্লি খন্দকার মুনসুরুল ইসলাম রইশ বলেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ঐতিহাসিক নিদর্শনের তালিকাভুক্ত করেছে। মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ ও পুরনো নকশা অক্ষুণ্ণ রেখে সংস্কারের দায়িত্ব এখন তাদের।
তিনি বলেন, মসজিদের ভেতরে প্রবেশ পথের ওপরে ফারাসি ভাষায় পাথরে খচিত শিলালিপিটি চুরি হয়ে যায়। যারা এ চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল; কিছুদিন পর তাদের একজনের পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পরে পাথরটি মসজিদের ভেতরে রেখে যায় সে। এরপরে আরও একজন একইভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। চিকিৎসায় পা কেটে ফেলেও ভালো হয়নি। পরে দুজনই মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের জীবদ্দশায় পাথর চুরির লোমহর্ষক ঘটনা তাদের মুখ দিয়েই বেরিয়ে আসে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।