জুমবাংলা ডেস্ক : পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ৯নং ধুলাসার ইউনিয়নের ১২৮নং চর ধুলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একটি শ্রেণিকক্ষে চলছে পাঠদান, কাগজে কলমে দেখানো হয়েছে ১১৭ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের বাকি কক্ষগুলো পড়ে আছে ফাঁকা। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
সকাল সাড়ে ৯টায় সরকারি নিয়মানুসারে প্রাথমিকের পাঠদান চলার কথা থাকলেও এসব নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে নিজস্ব নিয়মে চলছে বিদ্যালয়। ১০টার সময় ক্লাসে আসেন সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর। আকলিমা নামের এক শিক্ষিকা তিনিও ১০টার কিছু পরে আসেন, সাড়ে ১০টার দিকে গুটি গুটি পায়ে বিদ্যালয় প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষক আল আমিন বিশ্বাস। ওই সময় বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিকক্ষ শিক্ষার্থী শূন্য।
সাংবাদিক দেখে তড়িঘড়ি করে অফিস কক্ষে ঢুকে বিগত কয়েক দিনের স্বাক্ষর একসঙ্গে করেন সহকারী শিক্ষক আকলিমা। তবে হাজিরা খাতায় গত কয়েকদিন প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতি দেখা গেছে। আরেক সহকারী শিক্ষক সাওদা রয়েছেন ছুটিতে বলে জানান তবে ছুটির কোন ডকুমেন্টস দেখাতে পারেনি (সাওদার বাবা) প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের বিপরীতে উপস্থিত ছিলেন ৩ জন এবং প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট উপস্থিত ছিল ১১ জন। জানা গেছে, বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের অশোভন আচরণ, অনুপস্থিতি, অব্যবস্থাপনার কারণে এমন পরিস্থিতি। ম্যানেজিং কমিটি কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ, মনগড়া ও নিজেদের খেয়ালখুশি মত চালাচ্ছেন পাঠদান। বিদ্যালয়ের সামনে বড় করে একক প্রতিষ্ঠান লিখে, ঠিক যেন একক আধিপত্যই বিস্তার করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঠিকমতো আসেন না। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কোনো ক্লাস না নয়ায় গত ৭-৮ বছর ধরে স্কুলটি একবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পালা। অভিযোগ রয়েছে একই পরিবারের বাবা প্রধান শিক্ষক, মা সহকারী শিক্ষক, মেয়ে সহকারী শিক্ষক থাকায় পালা বদল করে ক্লাস নিচ্ছে তারা। বাবা আসলে মেয়ে আসে না, মা আসলে বাবা আসে না এ যেন চোর পুলিশের খেলা খেলছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।
স্থানীয় সজীব তালুকদারসহ একাধিক অভিভাবক জানান, সব অনিয়মের অবসানের মাধ্যমে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ও সুন্দর এবং স্বাভাবিক পাঠদানের মধ্য দিয়ে আবারও মুখরিত হয়ে উঠুক। আমরা এমনটাই প্রত্যাশা করি।
অভিভাবক সদস্য মোহাম্মদ সুফিয়ান তালুকদার আক্ষেপ করে জানান, শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাসে আসে না, নয়টার সময় আসার কথা থাকলেও তারা কখনো ১০টা, কখনো ১১টায় আসেন। তারা ঠিক মতো ক্লাস নেয় না। প্রধান শিক্ষক, তার মেয়ে স্ত্রীসহ একই পরিবারের তিনজন তারা একদিন এসে দুই-তিন দিনেরসই একবারে দিয়ে চলে যায়। আমরা চাই প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে চলুক।
স্থানীয় লিটন হোসেন তালুকদার জানান, শিক্ষকদের অনিয়মের কারণে আজ বিদ্যালয়টি প্রায় শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন আমাকে জানিয়েছে শিক্ষকদের স্থায়ীভাবে এখান থেকে অপসারণ না করলে তারা তাদের বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করবেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক অভিযোগ করে জানান, গত এক বছর আগে তার ছেলেকে এ বিদ্যালয়ে এনে ভর্তি করেন। কিন্তু গত এক বছরে সে এখনো পর্যন্ত বই দেখে রিডিং পড়তে পারে না। বর্তমানে বিদ্যালয়ে কাগজে কলমে মোট শিক্ষার্থী ১১৭ জন। কিন্তু উপস্থিতি হয় প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ জন। শিক্ষার্থী কম থাকায় অবসর সময় কাটাতে হয় শিক্ষকদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আল আমিন বিশ্বাস জানান, আমি, আমার স্ত্রী ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও কখনো ব্যক্তিগত প্রভাব খাটাইনি। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে গত দুইদিন স্কুলে আসেননি তবে ছুটি না নিয়ে অনিয়মের দায় স্বীকার করেন।
তিনি আরও জানান, সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা গত বৃহস্পতিবার স্কুলে আসেনি রোববার এসে স্বাক্ষর করার সুযোগ নেই। মেয়ে সাওদা সহকারী শিক্ষিকার অনুপস্থিতির বিষয় জানতে চাইলে ছুটিতে আছে বলে জানান তবে ছুটির কাগজ দেখাতে পারেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম জানান, ছুটি না নিয়ে স্কুলে অনুপস্থিত থেকে একই দিনে বিগত কয়েকদিনের স্বাক্ষর করার কোন সুযোগ নেই৷ এইগুলোই খুজতেছি দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার রহমান জানান, জেলায় ৫০ এর কম শিক্ষার্থী বিশিষ্ট বিদ্যালয়সমূহের তালিকায় ওই বিদ্যালয়টির নাম না থাকার বিষয়টি। তিনি জানান, অতিদ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।