জুমবাংলা ডেস্ক: বর্ষায় লণ্ডভণ্ড আর খরায় চৌচির তিস্তার চর। সেই ধু-ধু তপ্ত বালু চরে শীত মৌসুমে বিভিন্ন সবজি আর আলু চাষ করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে চরের কৃষকেরা। প্রতিবারের ন্যায় এবারও কাউনিয়া উপজেলার তিস্তার চরে আগাম আলু চাষ করেছেন অনেক কৃষক। রোপণের ৩০ থেকে ৪০ দিন বয়সে মাঠে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আগামসহ ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চরে রয়েছে ৮ হাজার হেক্টরের উপরে। আবহাওয়া আলু চাষের অনুকূলে থাকায় চরসহ সব আগাম আলুর ফসল ভালো হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত ফসল পাওয়ার আশাব্যক্ত করছে রংপুর কৃষি বিভাগ।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা বেষ্টিত বালাপাড়া ইউনিয়নের শাহাবাজ এলাকার চরে আলুর ক্ষেতে কাউকে প্রথম, আর কাউকে দ্বিতীয় দফায় প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে সেচ দিতে দেখা যায়।
আলুর ক্ষেতে পানি দিতে দিতে কথা হয় শাহাবাজ এলাকার কৃষক রমজানের সঙ্গে। সারের কৃত্রিম সংকটে অতিরিক্ত দাম আর বালুচরে সেচ দ্বারা পানি দেওয়ার কষ্টের কথা জানিয়ে রমজান বলেন, তিস্তার চরে চাষাবাদ করা মানে ভাগ্যের সঙ্গে বাজি ধরার মতো। অসময়ে বন্যা আর খরায় চৌচির তিস্তার চর থেকে ফসল সময় মতো ঘরে তুলতে পারার বিষয়েও চিন্তিত থাকতে হয়। তারপরও তিনি আগাম আলুর আবাদ করেছেন ৮০ শতাংশ জমিতে। ৪০ দিন বয়সে গাছের চেহারা মোটামুটি ভালো। এখন পর্যন্ত ব্লাড (পচারি) রোগের আক্রমণ দেখা দেয়নি। তিনি আশা করেন, এই আবহাওয়া থাকলে ভালো ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।
তিস্তার রেল সেতু সংলগ্ন তালুক শাহাবাজ এলাকার চাষি আনোয়ারুল ইসলাম। গতবারের চেয়ে দুই একর বেশি জমিতে আলু আবাদ করেছেন। ৩৫ দিন বয়সী আলুর ক্ষেতে ভিটামিন জাতীয় ঔষধ স্প্রে করতে করতে আনোয়ারুল জানান, আলু চাষে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। সার, কীটনাশকের দাম এবার অনেক বেশি। বাড়তি খরচের পর কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। ধানের মতো ন্যায্য দামে আলু ক্রয়ে সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন আনোয়ারুল ইসলাম।
তিস্তার চরের কৃষক ছাড়াও জেলার পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, এই ভরা মৌসুমে আলু রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা। এই এলাকার অনেক চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলু চাষে সম্ভবনা অনিশ্চিত। তারপরও লাভের আশায় তারা এবারও আলু রোপণ করছেন। সার সঙ্কটে পরিমাণে কম পাওয়াসহ অতিরিক্ত দামে সার ক্রয়ে ভোগান্তির কথা উঠে এসেছে অধিকাংশ কৃষকের মুখ থেকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (উদ্যান) কৃষিবিদ শামীমুর রহমান বলেন, জেলায় এখন পর্যন্ত আলু চাষাবাদের নির্ধারিত জমির মধ্যে প্রায় ৩০ ভাগে আলু রোপণ হয়েছে। আবহাওয়া এখনও পর্যন্ত গতবারের তুলনায় ভালো আছে। গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা হলেও ফলন ভালো হওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আলুর দাম পাওয়ার বিষয়ে এই কৃষিবিদ জানান, গত বছর এই জেলা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় চার জেলা আলু রপ্তানি করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিপণন অধিদপ্তর। কৃষকের লাভের কথা চিন্তা করে এবারও সেই ধারা অব্যাহত রেখে গতবারের চেয়ে রফতারির পরিমাণ বেশি হবে বলেও জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।