আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজায় হামলার প্রতিবাদে তুরস্ক ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করেছে। তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শুক্রবার এ নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে বলেছে, গাজায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালু না হওয়া পর্যন্ত এ বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
ইতিমধ্যে ইসরায়েলের বাসিন্দারা জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় নিয়ে চাপের মুখে রয়েছে। তুরস্কের নিষেধাজ্ঞার ফলে ইসরায়েলি শিল্প খাত ও ভোক্তাদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রতি বছর তুরস্কের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রায় ৭ বিলিয়ন বা ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়। তুরস্ক থেকে ইসরায়েল বিভিন্ন ধরনের মৌলিক কাঁচামাল, পণ্য ও খাদ্য আমদানি করে। ধারণা করা হচ্ছে, তুরস্কের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইসরায়েলে আমদানি করা খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এ ছাড়া আবাসন ও অটোমোবাইল খাতেও ব্যয় বাড়বে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে উত্তেজনা হয়েছে। এতে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হলেও বাণিজ্যে প্রভাব পড়েনি। যেমন ২০১০ সালে গাজা উপকূলে তুরস্কের ত্রাণবাহী জাহাজে ইসরায়েলি সেনাদের হামলার কারণে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল। তবে এই দফায় অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ক্যালকালিস্টের বরাত দিয়ে আল–জাজিরা বলেছে, তুরস্কের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা ইসরায়েলের কাছে ‘সম্পূর্ণ বিস্ময়’ হিসেবে এসেছে।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব যা হবে
তুরস্ক ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। ইসরায়েল দেশটি থেকে তুলনামূলক সস্তায় বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও পণ্য আমদানি করে। তুরস্ক থেকে ইসরায়েলে যাওয়া বেশির ভাগ পণ্যসামগ্রী সমুদ্রপথে পরিবহন করা হয়। ইসরায়েলিদের জন্যও তুরস্ক প্রধান আমদানি গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এর অন্যতম কারণ, সস্তা উৎপাদন খরচ এবং দুই দেশের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম দূরত্ব। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল থেকে মাত্র ১৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলে পণ্য পৌঁছানো যায়।
এখন ইসরায়েলের জন্য আমদানির বিকল্প উৎস খুঁজে পেতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে। নতুন আমদানি গন্তব্য তৈরির প্রক্রিয়াটি সহজ নয়; এ জন্য নানা ধরনের চুক্তি ও শর্তের বিষয় থাকে। এ ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে আনা পণ্যের দাম তুরস্কের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। গাজা যুদ্ধ ও ইয়েমেনের হুতিদের কারণে আরব অঞ্চলে পরিবহন খরচ ইতিমধ্যে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য বিকল্প উত্সগুলো ভৌগোলিকভাবে আরও দূরে অবস্থিত। ফলে তুরস্কের নিষেধাজ্ঞার সরাসরি প্রভাব পড়বে ইসরায়েলের অর্থনীতিতে।
বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর ইতিমধ্যে তুরস্কের শুল্ক বিভাগ ইসরায়েলগামী বিভিন্ন পণ্য ছাড়ের অনুমতি বাতিল করেছে বা দিচ্ছে না। ফলে সেসব পণ্য সরবরাহ-শৃঙ্খলের মাঝে আটকে গেছে। কিছু জাহাজ যাত্রা করার পর ফিরেও গেছে। তুরস্ক থেকে নির্মাণ খাতের প্রয়োজনীয় অনেক কাঁচামাল আমদানি করে ইসরায়েল। এ ছাড়া ইসরায়েলের গাড়ি বা অটোমোবাইল খাতেও তুরস্কের হিস্যা রয়েছে।
ক্যালকালিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের নিষেধাজ্ঞার নানামাত্রিক প্রভাব রয়েছে। যেমন ইসরায়েলে জ্বালানি তেলের অন্যতম সরবরাহকারী দেশ আজারবাইজান, যা আসে তুরস্কের মাধ্যমে। এখন তুরস্কের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এই তেল সরবরাহের বিষয়টি আসবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যদি এমন পরিস্থিতি ঘটে, তাহলে তা ইসরায়েলের জ্বালানি বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে তেল বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া তুরস্কের জন্য জটিল হবে। কারণ, এমন সিদ্ধান্তে তুরস্কের ঘনিষ্ঠ অংশীদার আজারবাইজানেরও ক্ষতি হবে।
অবশ্য তুরস্কও কিছু ক্ষেত্রে ইসরায়েলেরওপর নির্ভর করে। ২০২৩ সালে ইসরায়েলি পর্যটকদের অন্যতম প্রধান গন্তব্য ছিল তুরস্ক। গত বছর প্রায় ২৩ লাখ ইসরায়েলি পর্যটক তুরস্কে গেছেন। বর্তমানে ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে একটিও সরাসরি যাত্রীবাহী ফ্লাইট চালু নেই। সূত্র : আল জাজিরা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।