বুধবারের দুপুরে ইস্তাম্বুলের পশ্চিমে সিলিভ্রি এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল তুরস্ক। ৬ দশমিক ২ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি ছিল কেবল শুরু—এই একদিনেই আরও ছয়টি পৃথক ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে দেশটি। ভূমিকম্পের এমন পরপর আঘাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে। ইস্তাম্বুল শহর, যেখানে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের বসবাস, সেদিন যেন স্থবির হয়ে পড়েছিল।
তুরস্কে ভূমিকম্প এখন যেন প্রায় নিয়মিত এক ভয়াল বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পগুলোর একটি এটি। যদিও এই ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবুও ভবন থেকে মানুষজনের ছুটে বেরিয়ে আসা প্রমাণ করে তাদের ভয় কতটা গভীর ছিল।
Table of Contents
তুরস্কে ভূমিকম্প : এক দিনে সাতটি কম্পন, আতঙ্কে দেশজুড়ে জনজীবন
বুধবার (২৩ এপ্রিল) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে ইস্তাম্বুলে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। উৎপত্তিস্থল ছিল শহরের পশ্চিমে ৮০ কিলোমিটার দূরের সিলিভ্রি, ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৬.৯২ কিলোমিটার গভীরে। এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.২, যা পর্যবেক্ষকদের মতে, ভয়াবহ ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। তবে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ইস্তাম্বুলের পাশাপাশি আরও ছয়টি এলাকায় ভূমিকম্প হয়েছে। সিলিভ্রির উপকূলে ৩.৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়, যেখানে আরও পাঁচটি ভূমিকম্প ঘটে বুয়ুকসেকমেসে এলাকায়। সেগুলোর মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৫.৯, ৪.৪, ৪.৮, ৪.৫ এবং ৪.৯।
ভূমিকম্প পরবর্তী ব্যবস্থাপনা ও সরকারি প্রতিক্রিয়া
ভূমিকম্পের পরপরই তুরস্কের পরিবহন ও অবকাঠামো মন্ত্রী আবদুলকাদির উরালোগ্লু জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি চোখে পড়েনি। ইস্তাম্বুল বা মারমারা অঞ্চলের রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর, ট্রেন ও সাবওয়ে অবকাঠামো ঠিকঠাক আছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকা বলেছেন, কোনো ভবন ধসে পড়ার খবর এখনো পাওয়া যায়নি। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান দ্রুতই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও নগরায়ন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ভূমিকম্প সম্পর্কিত পরিস্থিতি ও প্রভাব নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে নির্দেশ দেন তিনি।
ভবিষ্যৎ ঝুঁকি এবং নাগরিকদের প্রস্তুতি
তুরস্কের ভৌগোলিক অবস্থান ভূমিকম্পপ্রবণ হওয়ায় ভবিষ্যতেও এমন বিপর্যয় ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নাগরিকদের ভূমিকম্প সম্পর্কে সচেতন করা এবং উপযুক্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
সরকারিভাবে ভূমিকম্পপ্রতিরোধক স্থাপত্যকৌশল ও জরুরি প্রস্তুতির অনুশীলন চালানো হচ্ছে। নাগরিকদেরও অনুরোধ করা হয়েছে, নিজেদের বাসস্থান শক্তপোক্ত ও নিরাপদ করে তোলার পাশাপাশি জরুরি ব্যাগ প্রস্তুত রাখার।
তুরস্কে ভূমিকম্প নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম Al Jazeera জানিয়েছে, এই ভূমিকম্পগুলো সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় কম্পন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্র তুরস্কের পরিস্থিতির প্রতি গভীর নজর রাখছে এবং প্রয়োজনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও তুরস্কে শক্তিশালী ভূমিকম্পে বহু প্রাণহানি হয়েছে। ফলে এবার পরিস্থিতি কড়া নজরে রাখছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ইস্তাম্বুলবাসীর অভিজ্ঞতা ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম
ইস্তাম্বুলে ভূমিকম্পের সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই রাস্তায় নেমে আসেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। স্কুল, অফিস থেকে শুরু করে আবাসিক ভবনগুলো দ্রুত ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছিল।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্রুতই উদ্ধারকারী দল পাঠিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের আওতায় স্কুলে, কলেজে এবং অফিসে ভূমিকম্পের সময় করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুঁশিয়ারি: রাশিয়ার সরাসরি সতর্কবার্তা ও বৈশ্বিক উদ্বেগ
FAQs
- তুরস্কে ভূমিকম্প কেন ঘনঘন হয়?
তুরস্কে দুটি প্রধান ভূমিকম্প প্রবণ প্লেট রয়েছে—এনাটোলিয়ান এবং ইউরেশিয়ান প্লেট, যার সংঘর্ষে ভূমিকম্প হয়ে থাকে। - এই ভূমিকম্পে কোনো হতাহতের খবর আছে কি?
বর্তমানে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে পর্যবেক্ষণ চলমান আছে। - ভবিষ্যতে তুরস্কে আরও ভূমিকম্প হতে পারে কি?
হ্যাঁ, কারণ অঞ্চলটি ভূমিকম্পপ্রবণ এবং ভবিষ্যতেও এমন ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। - সরকার কি প্রস্তুতি নিচ্ছে?
হ্যাঁ, সরকার সচেতনতামূলক প্রচার, প্রশিক্ষণ এবং অবকাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। - ইস্তাম্বুলবাসীরা কীভাবে নিরাপদ থাকবে?
বাসিন্দাদের ভূমিকম্প প্রতিরোধী বাড়ি তৈরি এবং জরুরি ব্যাগ প্রস্তুতের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।