আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টদের মধ্যকার ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ছিল যথেষ্ট সাফল্যমণ্ডিত। সিরিয়া শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে যে ‘আস্তানা শান্তি প্রক্রিয়া’ শুরু হয়েছিল প্রকৃতপক্ষে গত মঙ্গলবারের বৈঠক ছিল তার সপ্তম শীর্ষ সম্মেলন। খবর পার্সটুডে’র।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে উদ্দেশ্য করে সিরিয়া ইস্যুতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য ছিল ব্যাপক গঠনমূলক এবং প্রভাব সৃষ্টিকারী। তিনি পাশ্চাত্যের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারেও সতর্ক করে দিয়েছেন।
তেহরান সফর শেষ করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান দেশে ফিরেই সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় ফোরাত এলাকা থেকে অবিলম্বে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তেহরানে সিরিয়া বিষয়ক আলোচনায় গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনাদের চলে যেতে হবে। কারণ মার্কিন সরকার সিরিয়ার ওই এলাকায় অবস্থিত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, মার্কিন সেনারা সিরিয়ার তেল সমৃদ্ধ এলাকাগুলো দখলে রেখে সেখানকার তেল সম্পদ চুরি করছে এবং স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে। নিঃসন্দেহে আমেরিকার এ পদক্ষেপ সিরিয়ার সরকার ও জনগণের জন্য অনেক বড় ক্ষতি এবং এ অঞ্চলের স্বাধীনচেতা সরকার ও জাতিগুলোর জন্যও আগামী দিনে অনেক বড় সমস্যা তৈরি করবে।
অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আমেরিকা ও তার মিত্রদের সাথে যে কোনো ঐক্য ও বন্ধুত্ব বা আপোষকামিতা ওই দেশগুলোর জন্যই ক্ষতিকর হয়েছে। সিরিয়া বিষয়ে এবারের তেহরান সম্মেলনের অবকাশে ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টদেরকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেশমূলক বক্তব্য ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, ‘যে কোনো মূল্যে সিরিয়ার সার্বভৌমত্বকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।’
সিরিয়ায় সম্ভাব্য তুর্কি সামরিক অভিযানের কথা উল্লেখ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ‘এ পদক্ষেপ সন্দেহাতীতভাবে তুরস্ক ও সিরিয়াসহ সমগ্র এ অঞ্চলের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনবে এবং সিরিয়া সরকার রাজনৈতিক উপায়ে সংকট সমাধানের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা বানচাল হয়ে যাবে।’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সমালোচনামূলক বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু সিরিয়ায় যে কোনো সামরিক হামলা সন্ত্রাসীদের স্বার্থই রক্ষা করবে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে এসব সন্ত্রাসীরা কোনো নির্দিষ্ট একটি গ্রুপের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।’
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সম্প্রতি তুরস্কের শীর্ষ কর্মকর্তারা সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু এতে করে কেবল সিরিয়া সরকারই দুর্বল হয়ে পড়বে এবং এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে পাশ্চাত্যের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরাই লাভবান হবে। বিশেষ করে উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ফের সক্রিয় হয়ে উঠবে। এ কারণে তুরস্কের সরকার বিরোধী নেতারাও সিরিয়ায় হামলার পরিণতির ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট এরদোগান সরকার বিরোধীদের আপত্তিকে মোটেই আমলে নেননি। তুরস্কের খ্যাতনামা আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাহা অক ইউল সিরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের বিষয়ে বলেছেন, এরই মধ্যে অনেক দেশ এরদোগানের এ পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করায় তুরস্ক সরকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
যাইহোক, তেহরান সফর শেষ করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের যে আহ্বান জানিয়েছেন তাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।