ত্বকের দাগছোপ বা খুঁত এড়াতে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনীর ওপর নির্ভর করেন। কিন্তু এই ব্যস্ত জীবনে এটা-সেটা বেটে ত্বকে ব্যবহারেরই বা সময় কোথায়! যদিও রাসায়নিক উপাদানে ভরা এসব প্রসাধনীর মাধ্যমে সাময়িকভাবে উপকার পাওয়া যায়, দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী ফল পাওয়া প্রায় অসম্ভব। পাশাপাশি, এসব পণ্যের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও থেকে যায়।
যদি বাহ্যিক যত্নে সময় ব্যয় করা সম্ভব না হয়, তাহলে চেষ্টা করুন ত্বক যেন ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা ছড়ায়, সে ব্যবস্থা নেওয়ার। আর এ জন্য দরকার সঠিক খাবার। রোজকার খাদ্যতালিকায় এমন কিছু খাবার রাখা জরুরি, যেগুলো ত্বককে সুস্থ, সুন্দর ও জেল্লাদার রাখতে সাহায্য করে।
যেসব খাবার খেলে ত্বক ভালো থাকে—
শসা
শসায় প্রায় ৯৫ শতাংশ পানি থাকে। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শসার সালাদ বা জুস রাখুন। এতে রয়েছে কিউকারবিটাসিন, ভিটেক্সিন, ওরিয়েন্টিন এবং এপিজেনিনের মতো জৈব সক্রিয় যৌগ, যা ত্বককে আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে।
লেবু
লেবু ত্বক উজ্জ্বল করার পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। সালাদ, ডাল বা যেকোনো সবজির ওপর লেবুর রস ছড়িয়ে খেতে পারেন। যাঁদের ত্বকে ব্রণ আছে, তাঁরা নিয়মিত সকালে লেবু-মধুর পানি পান করলে উপকার পেতে পারেন।
কাঁচা হলুদ
হলুদ ত্বকের ব্রণ ও দাগ দূর করে ত্বককে সুন্দর ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের রান্নায় তো হলুদ ব্যবহার করাই হয়, চাইলে রোজ এক টুকরো কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। আবার, রাতে ঘুমানোর আগে দুধে অল্প কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে পান করলেও উপকার মেলে।
গ্রিন টি
নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল থাকে। চা পানের পর পরিত্যক্ত পাতা ঠান্ডা করে চোখের নিচে ব্যবহার করলে চোখের ফোলাভাব ও কালচে দাগ হ্রাস পেতে পারে।
পেঁপে
পেঁপেতে পানির পরিমাণ বেশি, পাশাপাশি এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A, C, ফোলেট, ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম। নিস্তেজ ত্বককে প্রাণবন্ত করতে ও ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে নিয়মিত পেঁপে খাওয়া উচিত।
বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও বীজ
কাঠবাদাম, চীনাবাদাম ও কাজুবাদাম রান্না বা সালাদে ব্যবহার করা যায়, আবার হালকা নাশতা হিসেবেও খাওয়া যায়। এ ছাড়া চিয়া সিড, তিসি, কুমড়ার বীজের মতো বিভিন্ন বীজ খাদ্যতালিকায় রাখলে ত্বক সুন্দর থাকে। এসব উপাদানে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ভিটামিন ‘ই’, যা দূষণ ও ধুলোবালিজনিত ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
পালংশাক
ভিটামিন C সমৃদ্ধ পালংশাক ত্বকের যত্নে অত্যন্ত কার্যকর। এটি ত্বকের কোষে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়।
ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার
ত্বককে জীবাণু ও ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের হাত থেকে রক্ষা করে ভিটামিন D। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতেও এর ভূমিকা রয়েছে। প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় ভিটামিন D সমৃদ্ধ কোনো না কোনো খাবার রাখুন। যেমন: মাখন, চিজ, মাছ, ডিম ও মাছের লিভারের তেল।
ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল
ত্বকের জন্য ভিটামিন C অত্যন্ত উপকারী। কমলা, আপেল, তরমুজ ও স্ট্রবেরির মতো ফল শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে, ত্বককে কোমল ও সতেজ করে। এ ধরনের ফলে থাকে আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
পর্যাপ্ত পানি পান
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানিশূন্যতা হলে ত্বক মসৃণতা হারায় এবং অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে পড়ে। পানি শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয় এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।
ত্বকের যত্ন কেবল প্রসাধনীর ওপর ছেড়ে না দিয়ে খাবারের মাধ্যমে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগানো সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে ত্বক দীর্ঘমেয়াদে থাকবে সুস্থ, কোমল ও উজ্জ্বল বিনা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।