সীমান্ত বিরোধ নিয়ে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের মধ্যে থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দেশ দু’টির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী বিরোধপূর্ণ এলাকা ‘তা মোয়ান থম’ মন্দির সংলগ্ন অঞ্চলে উভয়পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাগুলি হয়েছে, যার ফলে দুই থাই সৈনিক আহত হয়েছেন। খবর রয়টার্স
থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী জানায়, সীমান্তের বিতর্কিত অংশে কাম্বোডিয়া প্রথমে একটি নজরদারি ড্রোন পাঠায়। এরপর ভারী অস্ত্র নিয়ে সেনা মোতায়েন করে এবং গোলাগুলি শুরু করে। কাম্বোডিয়া রকেট লাঞ্চারসহ একাধিক অস্ত্র ব্যবহার করে বলে জানানো হয়। এর জবাবে থাই বাহিনীও পাল্টা প্রতিরোধ করে।
তবে ভিন্ন দাবি করেছে কাম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের মতে, থাইল্যান্ডের সেনারা বিনা উস্কানিতে কাম্বোডিয়ার ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং কাম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী আত্মরক্ষার্থে জবাব দেয়।
এর আগে বুধবার (২৩ জুলাই) কাম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার এবং নিজদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নেয় থাইল্যান্ড। কারণ হিসেবে জানানো হয়, বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় সদ্য পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইনের বিস্ফোরণে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় এক থাই সেনা পা হারিয়েছেন। থাই কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এই মাইনগুলো সম্প্রতি সময়ে স্থাপন করা হয়েছে।
কাম্বোডিয়া এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। কাম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন জানান, থাইল্যান্ডের গোলাবর্ষণে কাম্বোডিয়ার দুটি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যকার ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থলসীমান্তের বিভিন্ন অংশ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে চিহ্নিত নয়। শত বছরের পুরনো এই বিরোধ অনেকবার সশস্ত্র সংঘর্ষের রূপ নিয়েছে। ২০১১ সালে এক সপ্তাহব্যাপী গোলাগুলিতে অন্তত এক ডজন মানুষ নিহত হয়েছিল।
সাম্প্রতিক উত্তেজনার সূত্রপাত হয় মে মাসে এক কাম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার মাধ্যমে, যা পরে কূটনৈতিক সংকটে রূপ নেয় এবং সর্বশেষ সংঘর্ষে গড়ায়।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে কাম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। কিন্তু ওই ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয় এবং সিনাওয়াত্রাকে আদালত সাময়িক বরখাস্ত করে।
বর্তমানে থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। আমাদের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।”
থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশের গভর্নর চমনান চুয়েনতা ফেসবুক পোস্টে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।
কাম্বোডিয়ার দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের সময় ছড়িয়ে থাকা কয়েক মিলিয়ন ল্যান্ডমাইন এখনো দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যমান। তবে থাইল্যান্ড দাবি করেছে, বিতর্কিত সীমান্তে সম্প্রতি মাইন পুঁতে রাখা হয়েছে। কাম্বোডিয়া এ অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, “এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।