জুমবাংলা ডেস্ক : জমি নিয়ে বিরোধ। এক পক্ষের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে যুবককে থানায় নিয়ে আসা হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে চলছিল সালিশ-মীমাংসা। এরই ফাঁকে যুবক চলে যান থানার শৌচাগারে (টয়েলেট)। কিছুক্ষণ পরে যুবকের চিৎকারে পুলিশ ছুটে যায় শৌচাগারে। সেখানে যুবককে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন ওই যুবক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর দশমিনা থানায়। ওই যুবকের নাম লিটন খাঁ (৩৫)। তার বাড়ি দশমিনা থানার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। লিটন খাঁ ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। তার তিনটি সন্তান রয়েছে। দশমিনা থানা পুলিশ রবিবার বিকেল ৩টার দিকে লিটনকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে থানায় নেয়। এরপর অসুস্থ অবস্থায় তাকে পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাতে তাকে পুলিশ পাহারায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিববার রাত ১টার দিকে তিনি মারা যান। শেবাচিম হাসপাতালের মর্গে লিটনের পরিবার সাংবাদিকদের বলছেন, পুলিশ হেফাজতে তার মৃত্যু হয়েছে। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছেন। তবে পুলিশ বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে দাবি করেছে। ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
লিটনের স্ত্রী মাজেদা বেগম সাংবাদিকদের জানান, বাড়ির পাশেই আক্রাম খান সিনিয়র দাখিল মাদরাসা। জমি নিয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গত শনিবার রাতে মাদরাসা সংলগ্ন ওই জমির একটি পুকুরে কে বা কারা বিষ প্রয়োগ করে। এতে ওই পুকুরের মাছ মরে ভেসে ওঠে। পুকুরে বিষ দেয়ার ঘটনায় মাদরাসা সুপার মাওলানা সিহাব উদ্দিন তার স্বামী লিটনকে সন্দেহ করেন। তবে ওই সময় লিটন ঢাকায় ছিলেন। এরপর মাদরাসা সুপার লিটনের নামে দশমিনা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জমি নিয়ে বিবদমান সমস্যা সমাধানের কথা বলে ফোনে লিটনকে বাড়িতে আসতে বলেন। তিনি আরো জানান, রবিবার তার স্বামী ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন। ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। রাতে থানা পুলিশ জানায়, তার স্বামী অনেক অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
লিটনের স্ত্রী মাজেদা বেগম বলেন, সকালে (সোমবার) জানতে পারি, আমার স্বামী মারা গেছে। থানায় নেয়ার সময় লিটন সুস্থ ছিলেন বলে দাবি করেন তার স্ত্রী মাজেদা বেগম। তিনি আরো বলেন, তার শরীরে কোনো রোগ ছিল না। হঠাৎ করে কীভাবে মৃত্যু হলো তা পুলিশই ভালো বলতে পারবে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
দশমিনা থানার ওসি মো. জসিম স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, মাদরাসা কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে লিটন খাঁ নামের ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। দুই পক্ষকে নিয়ে থানায় কথা হচ্ছিল। এরই মধ্যে এশার নামাজের বিরতি দেয়া হয়। তখন থানার বাথরুমে যান লিটন। এর পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তার হাতে একটি বোতল ছিল। ধারণা করা হচ্ছে তিনি বিষপান করেছেন।
তিনি আরো বলেন, তাৎক্ষণিক লিটনকে দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার রাত ১টার দিকে লিটন মারা যান। থানায় কীভাবে বিষ এলে সে ব্যাপারে ওসি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি দাবি করেছেন, পুলিশ হেফাজতে তাকে মারধর তো দূরের কথা, লিটনের সঙ্গে কেউ দুর্ব্যবহারও করেনি।
দশমিনা ও গলাচিপা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, লিটন তার নিজের কাছে কীটনাশকজাতীয় তরল পদার্থ বোতলে লুকিয়ে রেখেছিলেন। থানায় প্রবেশের কিছু সময় পর তিনি বাথরুমে যান। এরপর ওই তরল পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। থানায় কীভাবে বিষের বোতল নিয়ে যুবক প্রবেশ করলেন, সেন্ট্রি বা কারোর দায়িত্বে গাফিলতি ছিল কি-না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্তকমিটি গঠন করা হয়েছে।
দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ফেরদৌস জানান, মাদরাসা সুপার পুকুরের মাছ মারার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি সুপারিশ আকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় পাঠানো হয়েছে। সূত্র : কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।