জুমবাংলা ডেস্ক: সবুজ রঙের খেজুরটি এখন বেশ লাল হয়েছে। থোকায় থোকায় ঝুলে আছে খেজুর। খেজুরের নামটি আজোয়া। বলা হচ্ছে বগুড়ায় প্রথমবারের মত সৌদি আরবের আজোয়া খেজুরের ফলন ধরেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদক আবদুর রহমান টুলু-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার আমড়া গোহাইল গ্রামের আলহাজ আবু হানিফার বাগানে এক নজর খেজুর দেখতে সাধারণ মানুষ ভিড় করছে। এক জমিতে বিভিন্ন জাতের নানা ফল চাষ করায় ব্যাপক সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তার খেজুর চাষের সফলতার পর স্থানীয় অনেকেই সৌদি আরবের আজোয়া জাতের খেজুর চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বগুড়ার কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের বেশিরভাগ সময় এখন গরমকাল থাকছে যে কারণে সৌদি আরবের আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেজুর চাষ করা সম্ভব।
জানা গেছে, বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার আমড়া গোহাইল গ্রামের আলহাজ¦ আবু হানিফা ২০১৮ সালে হজে যান। হজ থেকে ফেরার সময় বেশ কিছু আজোয়া খেজুরের বীজ সংগ্রহ করে আনেন। বীজগুলো দেশে নিয়ে এসে ২০১৯ সালে প্রথমে তিনি ১৯টি বীজ টবে রোপণ করেন। এরমধ্যে ১৬টি বীজের চারা বের হয়। টব থেকে তুলে নিজের ৯ শতক জমির মধ্যে আজোয়া খেজুর রোপণ করেন। ওই ৯ শতক জমির মধ্যে তিনি কামরাঙ্গা, মিষ্টি তেঁতুল, আপেলকুল, বারোমাসি আম বারি ফোর, মাল্টা, ত্বীন ফল, জামরুল, দারুচিনি, লিচু, বড়ই, পেঁপে, থাই পিয়ারা, লেবু, আলু বোখারার চাষ করেছেন। এখন তার বাগানের প্রতিটি গাছে ফল ধরেছে। মিশ্র বাগান গড়ে যেমন সফলতা পেয়েছেন ঠিক তেমনি আজোয়াজাতের খেজুর চাষ করেও তিনি সফলতা পেয়েছেন। খেজুরগুলো পাকলে তিনি বিক্রি করবেন না চারা তৈরি করবেন সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেননি। খেজুর বাগানে খেজুর ধরায় স্থানীয়রা সেই খেজুর বাগান দেখতে ভিড় করছে। স্থানীয় চাষিরা বীজ সংগ্রহের জন্য ধরনা দিচ্ছেন। বেকার যুবকরা আবু হানিফার কাছে আজোয়া খেজুর চাষের কলা কৌশল জেনে নিচ্ছেন।
আলহাজ আবু হানিফা জানান, মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি স্ত্রী ও চার ছেলে এবং ৩ কন্যা সন্তানের জনক। ২০১৮ সালে হজ থেকে ফেরার সময় যেসব বীজ নিয়ে এসেছিল তা প্রথম দিকে চারা হবে কি না তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। টবে চারা করার পর তিনি কৃষি বিভাগের সহযোগিতা গ্রহণ করেন। পরে ২০১৯ সালে সেগুলো মাটিতে রোপণ করেন। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে গাছগুলো। সেই গাছগুলোর মধ্যে একটিতে প্রায় ২০ মাস পর খেজুর ধরেছে। বর্তমানে গাছে যে দুটি থোকায় খেজুর ধরেছে তাতে আনুমানিক ১০ কেজি খেজুর পাওয়া যেতে পারে। তবে পরের বছর এর চেয়ে তিন গুণ বেশি খেজুর পাওয়া যাবে। খেজুরগুলো সব সময় নেট দিয়ে রাখতে হয়। আজোয়া খেজুরগুলোর পাকানোর জন্য তিনি প্রতিদিন গাছের যত্ন করেন। ভবিষ্যতে আরো বড় খেজুর বাগান করার চিন্তা রয়েছে তার। তিনি জানান, স্থানীয় চাষিরা তার কাছে আজোয়া খেজুরের বীজ চেয়েছে। যুবকরা আসছেন কি ভাবে এই চারা তৈরী করে বিস্তৃত করা যায়। খেজুর বাগান গড়তে বগুড়া হর্টি কালচারাল সেন্টারের কর্মকর্তারা তাকে সহযোগিতা করেছে বলে তিনি জানান।
এর আগে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সদরের তেতুলিয়া গ্রামের মৃত অছিম প্রমানিকের ছেলে বাবলু প্রামানিক দুবাই খেজুর চাষ করেছিল। বাবলু ২০০১ সালে দুবাই এর রাজধানী আবুধাবীতে কাজের সন্ধানে যান। সেখানে একটি কোম্পানীতে শ্রমিক হিসেবে প্রায় ১৫ বছর কাজ করেন। এই দির্ঘ সময়ে সে খেজুর বাগান তৈরীর বিষয়টি রপ্ত করেন। তিনি নিজে নিজে দুবাই খেজুর গড়ার স্বপ্ন দেখেন। দুবাইয়ে কাজ করে যা টাকা জমা হয়েছিল তা নিয়ে গত প্রায় ১৫ বছর পর ফিরে ২০১৬ সালের দিকে চারা তৈরী করে একটি বাগান গড়েন।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষি অফিসার মো. আদনান বাবু জানান, নন্দীগ্রাম উপজেলায় এই প্রথম আলহাজ আবু হানিফা সৌদির আজোয়া খেজুর চাষ করছেন। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সব রকমের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আগামী দিনে যেন বড় আকারে বাগান এবং বীজ তৈরী করা যায় সে বিষয়ে বাগান মালিককে বলা হয়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হর্টি কালচারাল সেন্টার বনানীর উপ পরিচালক আব্দুর রহীম বলেন, নন্দীগ্রামে যে জাতের খেজুর চাষ হয়েছে তা আজোয়া জাতের। এই আজোয়া জাতের খেজুর বগুড়ায় প্রথমবারের মত চাষ হলো। এর আগে দুবাই ভিত্তিক ভিন্নজাতের খেজুর চাষ হয়েছিল। তিনি বলেন সৌদি খেজুর মরুভুমির ফল। এই আজোয়া খেজুর চাষে বিশেষ যত্ন নিতে হয়। দেশে এখন দির্ঘসময় গরমকাল থাকায় সৌদি খেজুর চাষ করা সম্ভব। এর বীজের ব্যবস্থা করা গেলে চাষটি ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।