সারা দেশে দলিল রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনছে সরকার। নতুন এই ব্যবস্থা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দীর্ঘদিন ধরে দালাল ও দলিল লেখকদের সিন্ডিকেট, অতিরিক্ত ফি আদায় এবং জটিল প্রক্রিয়ার কারণে সাধারণ ভূমি মালিকদের ভোগান্তি কমাতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী জমির রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় জানায়, এখন থেকে জমির ধরণ ও দলিলের শ্রেণীভেদে স্পষ্ট রেজিস্ট্রেশন ফি কাঠামো প্রণয়ন করা হয়েছে, যা দেশের প্রতিটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বাধ্যতামূলকভাবে টাঙিয়ে রাখতে হবে। ফলে কোনো জমির দলিল করতে কত টাকা প্রয়োজন, স্ট্যাম্প খরচ, রেজিস্ট্রেশন ফি, আইটি সার্ভিস চার্জ—সব মিলিয়ে মোট ব্যয় কত হবে, তা নাগরিকরা আগেই জেনে নিতে পারবেন।
দীর্ঘদিন ধরে ভূমি মালিকদের অভিযোগ ছিল, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে তারা দলিল লেখকদের তথাকথিত সিন্ডিকেটের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হন। অভিযোগ অনুযায়ী, দলিল লেখকদের একটি অংশ ইচ্ছেমতো ‘হিসাব’ দেখিয়ে নির্ধারিত ফি-র চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা নিত এবং কেউ আপত্তি জানালে বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি করত।
এই অনিয়ম বন্ধ করতে সরকার দলিল লেখক লাইসেন্স বিধিমালা ২০১৪ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় শুধুমাত্র অনুমোদিত ও লাইসেন্সধারী দলিল লেখকরাই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কাজ করতে পারবেন, অন্য কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপ সেখানে দলিল লেখার কাজ করতে পারবে না। কর্তৃপক্ষের আশা, এ পদক্ষেপে রেজিস্ট্রেশন ফি সংক্রান্ত ভোগান্তি কমবে এবং ভূমি সেবা আরও স্বচ্ছ হবে।
এছাড়া, যেসব ভূমি মালিক ফি গণনায় বিভ্রান্ত হন, তাদের জন্য অনলাইনে “দলিল রেজিস্ট্রেশন ক্যালকুলেটর” চালু করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে ক্যালকুলেটর অ্যাপ ডাউনলোড করে জমির শ্রেণী, অবস্থান, পরিমাণ ও মৌজার তথ্য দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রকৃত খরচ জানিয়ে দেবে।
রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮-এর ধারা ১৭ অনুযায়ী জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। আনরেজিস্টার্ড দলিলের ভিত্তিতে মালিকানা দাবি করা যাবে না, রেকর্ড সংশোধনও করা যাবে না—এই বিষয়েও সরকার ভূমি মালিকদের সচেতন করছে।
যদি কোনও দলিল লেখক বা অফিস সংশ্লিষ্ট কেউ বাড়তি টাকা দাবি করে বা প্রতারণা করে, ভূমি মালিকরা সরাসরি জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে পারবেন। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের নম্বরে কল করেও অভিযোগ জানানো সম্ভব।
সরকার মনে করছে, এই নতুন ব্যবস্থা চালু হলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের পুরোনো দালালচক্রের আধিপত্য কমে আসবে, রেজিস্ট্রেশন খরচে স্বচ্ছতা তৈরি হবে এবং ভূমি মালিকেরা প্রতারণা থেকে রক্ষা পাবেন। নতুন নিয়ম ও ফি কাঠামো বাস্তবায়ন হলে ভূমি সেক্টরে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



