জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাযরেহ হক গত বুধবার গুলশান থানায় তাঁর বড় বোন ও মাসহ ট্রান্সকমের আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছেন।
শাযরেহের বড় বোন সিমিন রহমান ট্রান্সকমের বর্তমান সিইও। তাঁর মা শাহনাজ রহমান গ্রুপটির বর্তমান চেয়ারম্যান। দুটি মামলায় শাহনাজের নাম রয়েছে।
সিমিন রহমান বিশ্বাসভঙ্গ, জালিয়াতি ও দলিল জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শাযরেহ ও তাঁর প্রয়াত ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে পারিবারিক সম্পত্তির—যার মূল্য দাবি করা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা—ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন, এই অভিযোগে এ মামলা করেন শাযরেহ। খবর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
অর্থ আত্মসাৎ
মামলার নথিতে শাযরেহ লিখেছেন, তাঁর বাবা বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও এফডিআরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রেখে মারা যান। ওই অর্থের নমিনি ছিলেন তাঁর মা শাহনাজ রহমান।
শাযরেহ অভিযোগ করেছেন, ২০২০ সালের ১ জুলাই লতিফুর রহমান মারা যাওয়ার পর ওই টাকা তাঁর উত্তরাধিকারীদের (ওয়ারিশ) মধ্যে বণ্টন করে দেওয়ার কথা ছিল।
ট্রান্সকম গ্রুপের ৫ শীর্ষ কর্মকর্তা গ্রেপ্তারট্রান্সকম গ্রুপের ৫ শীর্ষ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
কিন্তু তাঁর বাবার মৃত্যুর পর তাঁর বড় বোন (সিমিন) সব টাকা নিজের ও তাঁর মায়ের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলেন বলে মামলার এজাহারে দাবি করেছেন শাযরেহ।
শাযরেহ আরও দাবি করেছেন, ২০২০ সালের ৩ আগস্ট তাঁর বড় বোন ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্সের ১৮ শতাংশ শেয়ার উক্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকা থেকে ৬০ কোটি টাকা দিয়ে কিনে নেওয়ার বাহানায় নিজের নামে হস্তান্তর করেন।
শাযরেহ দাবি করেছেন, তাঁর বোন ও মা পরস্পরের যোগসাজশে লতিফুরের অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করে এই কাজ করেছেন।
ট্রান্সকমের শেয়ার থেকে উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করা
আরেক মামলায় শাযরেহ দাবি করেছেন, তাঁর বোন ট্রান্সকমের আরও চার কর্মকর্তার সহযোগিতায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তিনটি ফর্ম ১১৭ (হস্তান্তর দলিল) তৈরি করে রেজিস্ট্রার অভ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) জমা দিয়ে বেআইনিভাবে ট্রান্সকমের বেশিরভাগ শেয়ারের মালিকানা নিয়ে নেন।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, বাদীকে জানানো হয়েছিল যে তাঁর বাবা তাঁকে ৪ হাজার ২৭০টি শেয়ার, তাঁর ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে ৪ হাজার ২৭০টি শেয়ার এবং তাঁর বোনকে ১৪ হাজার ১৬০টি শেয়ার হস্তান্তর করেছেন।
কিন্তু বাদী কখনই হস্তান্তর দলিলে (ফর্ম ১১৭) স্বাক্ষর করেননি বলে দাবি করেছেন। তাঁর বাবাও জীবিতাবস্থায় কখনও হস্তান্তর দলিলে স্বাক্ষর করেননি বলে দাবি করেছেন বাদী শাযরেহ হক। আসামিরা এসব নথি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
ডিড অভ সেটেলমেন্ট (মীমাংসার দলিল) জালিয়াতি
আরেকটি মামলায় শাযরেহ দাবি করেছেন, তাঁর মা ও বোন ট্রান্সকমের অন্য তিন কর্মকর্তার সহযোগিতায় তাঁর [শাযরেহ] এবং তাঁর ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে ডিড অভ সেটেলমেন্ট (মীমাংসার দলিল) তৈরি করেছেন।
ট্রান্সকম গ্রুপ: ৩ মামলা, আসামি বড় বোন–মা–ভাগ্নেট্রান্সকম গ্রুপ: ৩ মামলা, আসামি বড় বোন–মা–ভাগ্নে
শাযরেহ দাবি করেছেন, পরে ওই ডিড অভ সেটেলমেন্ট ব্যবহার করে সিমিন ও শাহনাজ ট্রান্সকম গ্রুপের শেয়ার নিজেদের নামে হস্তগত করাসহ গ্রুপের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইওর পদ নিজেদের নামে করে নিয়েছেন।
শাযরেহ দাবি করেছেন, তিনি কখনও তাঁর পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে ডিড অভ সেটেলমেন্ট করেননি।
তিন মামলায় দণ্ডবিধির যেসব ধারা উল্লেখ করা হয়েছে
তিনটি মামলার মধ্যে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর নিম্নলিখিত ধারাগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: ৪০৬, ৪১৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭০ ও ৪৭১।
৪০৬ নং ধারাটি বিশ্বাসের ফৌজদারি লঙ্ঘন; এ অপরাধের শাস্তি তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা অথবা উভয়ই। শাযরেহ হক তার মা ও বোন দুজনকেই এ অভিযোগে অভিযুক্ত কছেরেন।
তিনি তাদের উভয়ের বিরুদ্ধে প্রতারণা (৪১৯); মূল্যবান জামানত, উইল ইত্যাদি জালিয়াতির জন্য জাল সীলমোহর তৈরি (৪৬৭); প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি (৪৬৮), জাল দলিল (৪৭০) এবং জাল দলিলকে খাঁটি দলিলরূপে ব্যবহার (৪৭১) ব্যবহার করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।