জুমবাংলা ডেস্ক : গত ২১ জুলাই সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর অচিন্তপুর এলাকার সড়কের পাশের ডোবা থেকে এক যুবকের গলাকাটা ক্ষতবিক্ষত লা’শ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায় অলিউর রহমান নামের ওই যুবকের বাড়ি জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের আসামমোড়া গ্রামে।
প্রসঙ্গত, এক বছরে আগে অলিউরের স্ত্রী তানিয়া বালিশচাঁপায় খু’ন হন। এতে অলিউর, তার মা ও ভগ্নিপতিসহ পরিবারের ৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন তানিয়ার পিতা গোলাম নূর।
রাতে আঁধারে সংঘটিত অলিউর খু’নের বিষয়টির রহস্যে উদ্ঘাটনে কূলকিনারা করতে না পারলেও নিহতের পকেটে থাকা একটি বাস টিকেট ও মোবাইল কল লিস্টের সূত্র ধরে খু’নি এবং খু’নের পরিকল্পনাকারীদের সনাক্ত করে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় পুলিশের।
তানিয়া হ’ত্যা মামলা থেকে বাঁচতে চাঞ্চল্যকর ওই হ’ত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনা করেন নিহতের ভগ্নিপতি ফখর উদ্দিন। এই পরিকল্পনায় শামিল ছিলেন নিহতের মা জয়ফুল বেগম ও স্থানীয় ইউপি সদস্য রওশন আলী।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি বালিশচাপা দিয়ে হ’ত্যার পর লা’শ পুকুরে ফেলে দেয়া হয় অলিউরের স্ত্রী তানজিনা আক্তার তানিয়ায়। ওই মামলায় অলিউরসহ ভগ্নিপতি ফখর উদ্দিন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আসামি করেন তানিয়ার স্বজনরা। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি অধীনে তদন্তাধীন রয়েছে। এর পর থেকেই শুরু হয় পারিবারিক কলহ।
পথের কাঁটা অলিউরকে সরাতে পারলেই তানিয়া হ’ত্যা মামলা থেকে বাকি আসামিরা বেঁচে যাবে এমন উদ্দেশ্যেই মা, ভগ্নিপতি ও স্থানীয় এক ইউপি রওশন আলী ভাড়াটে খু’নি নিয়ে হ’ত্যা করায় অলিউরকে।
আরো জানা যায়, স্ত্রী হ’ত্যার পর থেকে অলিউর বাড়ি ছেড়ে গা-ঢাকা দেয়। পরিবারের সঙ্গেও সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ রাখে। এর কিছুদিন পর তার শ্বাশুড়িকে ফোন করে স্ত্রী হ’ত্যায় সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে অলিউর। এতে মামলার অপর আসামি ফখরসহ তার পরিবারের সদস্যরা ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। এই দ্বন্দ্বের জেরেই অলিউরকে ভাড়াটে খু’নি দিয়ে হ’ত্যা করায় স্থানীয় দলকুতুব গ্রামের বাসিন্দা তার ভগ্নিপতি ফখর উদ্দিন।
পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবাববন্দিতে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন নিহত অলিউরের ভগ্নিপতি ফখর উদ্দিন।
পুলিশ জানায়, অটোরিক্সা কিনে দেওয়া লোভ দেখিয়ে অলিউরকে সুনামগঞ্জে নিয়ে আসেন তার ভগ্নিপতি ফখর উদ্দিন। ২০ জুলাই দিবাগত রাত ১২টার দিকে টাকা দেওয়ার কথা বলে সদর উপজেলার অচিন্তপুর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ফখরের সাথে ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে এনাম ও মুহিতুল নামের দুই যুবক অলিউরকে এ সময় গলা কেটে ও কু’পিয়ে হত্যা’ করে সড়কের পাশের ডোবায় ফেলে রেখে যায়।
এদিকে, ঘটনার পর নিহতের পিতা গোলাপ মিয়া ৬ জনকে আসামি করে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি মামলা দয়ের করেন। কিন্তু পুলিশ যখন খু’নের রহস্য উদ্ঘাটনে অধিকতর তদন্ত নামে তখন একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই খু’নের সাথে এজহার নামীয় কোন আসামির সম্পৃক্ততার বিষয়টি এখনও পায়নি পুলিশ। তবে এ ব্যাপারে আরো তদন্ত চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে, সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ অলিউর হ’ত্যাকাণ্ড নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে জানানো হয় নিরপেক্ষ তদন্ত করতে গিয়ে এজাহারে বাইরে থাকা দুই ভাড়াটে খু’নি, নিহতের মা, ভগ্নিপতি ও স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। পরে দুই ভাড়াটে খু’নি এনাম ও মুহিতুল এবং খু’নের পরিকল্পনাকারী ভগ্নিপতি ফখর উদ্দিনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। গ্রেফতারকৃত তিনজনই হ’ত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নাল আবেদীন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুর রহমান, পরিদর্শক তদন্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন, পরিদর্শক অপারেশে সঞ্জুর মুর্শেদ ও তদন্তকারী কর্মকর্তা জিন্নাতুল তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।