জুমবাংলা ডেস্ক: দেশে প্রথমবারের মতো দিনাজপুরের হাকিমপুরে উন্নতমানের লোহার আকরিকের (ম্যাগনেটাইট) খনি আবিষ্কৃত হয়েছে।
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের (জিএসবি) কর্মকর্তারা দুই মাস ধরে কূপ খনন করে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
খনন কাজে নিয়োজিত জিএসবির উপপরিচালক মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ‘বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে লোহার খনি আবিষ্কার করা হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশের আকরিকে লোহার শতাংশ ৬৫-এর ওপরে। কানাডা, চীন, ব্রাজিল, সুইডেন ও অষ্ট্রেলিয়ার খনির লোহার মান ৫০ শতাংশের নিচে। জয়পুরহাটে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) পরীক্ষাগার থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভূগর্ভের এক হাজার ৭৬০ ফুট নিচে ৪০০ ফুট পুরুত্বের লোহার আকরিকের একটি স্তর পাওয়া গেছে, যা এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। খনিটির আয়তন প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার। খনিতে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন টন লোহাসহ মূল্যবান পদার্থ রয়েছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম লোহার খনি। ১ হাজার ১৫০ ফুট গভীরতায় চুনাপাথরের সন্ধানও মিলেছে।’
মোহাম্মদ মাসুম আরও জানান, জিএসবি ২০১৩ সালে ইসবপুর গ্রামের ৩ কিলোমিটার পূর্বে মুশিদপুর এলাকায় কূপ খনন করে খনিজ পদার্থের সন্ধান পেয়েছিল। সেই গবেষণার সূত্র ধরে চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল থেকে ইসবপুরে কূপ খনন শুরু করা হয়। এরপর ১ হাজার ৩৮০ থেকে দেড় হাজার ফুট গভীরতা পর্যন্ত খননকালে আশার আলো দেখা যায়। এ খবর পেয়ে গত বছরের ২৬ মে জিএসবির মহাপরিচালক জিল্লুর রহমান চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখানে পরিদর্শনে আসেন।
এই অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে সমুদ্র ছিল যার কারণে এখানে আগ্নেয় শিলার অবস্থান থাকায় লৌহ খনিজ পদার্থের খনি রয়েছে বলে জানান তিনি।
জিএসবির ড্রিলিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপপরিচালক মাসুদ রানা কালের বলেন, ‘গত বছরের ২১ এপ্রিল থেকে ইসবপুর গ্রামে খনিজ সম্পদের মজুদ, বিস্তৃতি ও অর্থনৈতিক সম্পর্কতা যাচাইয়ের জন্য জিএসবি ড্রিলিং কাজ শুরু করে। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৭৬০ ফুট ড্রিলিং করা হয়েছে। এর মধ্যে ম্যাগনেটিক মিনারেল, হেমাটাইট, ম্যাগনেটাইট ও লিমোনাইট উপাদান পাওয়া গেছে। এতে আরো ভালো কিছু পাওয়ার আশা করছি।’
লোহার খনির সন্ধান মেলার খবরে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। ফলে এলাকার উন্নয়ন ও বহু মানুষের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছে তারা।
জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেন, ‘লোহার খনি আবিষ্কার হওয়ায় আমরা খুবই খুশি। এটি দ্রুত উত্তোলন করলে একদিকে যেমন এলাকার লোকজনদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে তেমনি জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। তাই এই খনির কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।’
স্থানীয় মনসপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজার রহমান বলেন, খনির কার্যক্রম না থামলে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান হবে। তেমনি পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের জীবনযাত্রার মান। এমনই আশায় বুক বাঁধছে এলাকার মানুষ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।